দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি সম্প্রসারণে মহাপরিকল্পনা লবণসহিষ্ণু জাত নির্বাচন করছে মন্ত্রণালয়
জাফর আহমদ: দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি সম্প্রসারণ করতে লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও রোদসহিষ্ণু জাত নির্বাচন করছে মন্ত্রণালয়। এ জন্য সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার গবেষণালব্ধ বিভিন্ন জাত ছাড় করছে। এরই অংশ হিসাবে আগামী কাল রোববার নতুন তিনটি ধানসহ দুটি আলুর জাত অনুমোদন দিবে জাতীয় বীজ বোর্ড। রোববার যে তিনটি জাত ছাড় হচ্ছে তা হলোÑ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি-৭৮। এ জাতটি আমন মৌসুমে চাষের উপযোগী। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ^বিদ্যালয় উদ্ভাবিত বিইউ ধান-২ এবং বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিনা গম-১। এর বাইরে একই দিন আমদানি করা হাইব্রিড জাতের ১১টি জাতও ছাড় করা হবে। এসব জাতই দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া উপযোগী নতুন জাতের আলুর জাত ছাড় হবে। এ জাত দুটি হলো বারি-৭২ ও বারি-৭৩ জাতের আলু। আলুর জাত দুটি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এতদিন দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা উপযোগী ধানের উপযোগী জাতের গবেষণা ও ছাড় করা হলেও এবার নতুন জাতের আলু উদ্ভাবনে মনোযোগ দেয় সরকার। তারই ধারাবাহিকতা এসব জাত ছাড় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রধান বীজ কর্মকর্তা মো. আজিম উদ্দিন জানান, এখন বীজ ছাড় করার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কম জমিতে বেশি ফলন ও দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি সম্প্রারণে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে- এ দুটি বিষয় মাথায় রেখেই গবেষণা ও বীজ ছাড় করা হবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের খাদ্যভা-ার খ্যাত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নতুন করে আরও বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু দেশে ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে আগামীতে বেশি খাদ্যের প্রয়োজন। সেকথা চিন্তা করেই সরকার তুলনামূলক কম চাষাবাদ ও ফলন কমÑ এ রকম এলাকায় নিবিড় চাষের পরিকল্পনা শুরু করে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন সংশ্লিষ্ট দফতর বা সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এবং বেসরকারি খাত ও সুশীলসমাজের মতামত নিয়ে এফএওর কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি উন্নয়নের জন্য ২০১৩ সালে এক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে। মহাপরিকল্পনার আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের ১৪ জেলাÑ সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ মহাপরিকল্পনায় বৃহৎ আকারে পাঁচটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে জমির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন, ভূ-উপরিস্থ পানি কৃষি সেচে ব্যবহার এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোলট্রি ও গরুর খামার স্থাপনে সহায়তা করা। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে যেসব খাতভিত্তিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলোÑ শস্য, বনায়ন ও কৃষিপণ্য উৎপাদন, মৎস্য চাষ, গবাদিপশু, পুষ্টি, পানি ব্যবস্থাপনা, বাঁধ ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, কৃষিভিত্তিক ব্যবসা, কৃষিঋণ ও দক্ষতা উন্নয়ন করা। এসব বিষয় মাথায় রেখেই কৃষি মন্ত্রণালয় নতুন নতুন ফসলের জাত ছাড় করছে। আগামী কাল রোববার দক্ষিণাঞ্চলের উপযোগী ধানের নতুন জাত ছাড় করার পাশাপাশি দুটি নতুন আলু ও একটি গমের নতুন জাত ছাড় করার মধ্যে গবেষণাতে বৈচিত্র্য যোগ হচ্ছে। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন