খাদিজাতে হোঁচট খেল আ.লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি
বিপ্লব বিশ্বাস : খাদিজা, মিতু ও তনু হত্যাকা- নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী শিবিরে সমালোচনা চলছে সবসময়। সমালোচনা হচ্ছে, এমন রাজনীতির কারণেই রামপাল ইস্যুতে সাইকেল র্যালিকেও ভয় পায় সরকার। বিরোধীপক্ষের রাজনীতির সব পথ বন্ধ প্রায়। চার দেয়ালের মাঝখানে বসে প্রেস ব্রিফিং ছাড়া কার্যত আর কিছুই করার নেই সরকারবিরোধীদের।
তবে সরকার সমর্থকদের নানা কুকীর্তির কারণে আওয়ামী লীগই যেন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। সম্প্রতি সিলেটে এক ছাত্রলীগ নেতার সন্ত্রাসী কর্মকা-ে কলেজছাত্রীর জখমের ঘটনায় তা আরেকবার যেন প্রমাণ হলো। রাজনীতি প্রায় অবরুদ্ধ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংসদ ও সংসদের বাইরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সামান্য ইস্যুকে কেন্দ্র করেও আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রাখতে চাইছে। দখলে রাখছেও বটে। প্রশাসনের ওপর ভর করে রাজনীতির সবই এখন আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন সম্মেলন নিয়ে রাজনীতির মাঠে সরব আওয়ামী লীগ।
আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর দলটির সম্মেলন হওয়ার কথা। এর আগে তিনবার পিছিয়েছে সম্মেলনের তারিখ। তারিখ পেছালেও সম্মেলন নিয়ে দলের ভেতর-বাইরে রাজনীতি হয়েছে ব্যাপক। রাজনীতি হচ্ছে এখনো। মূলত রাজনীতির দৃষ্টি আওয়ামী লীগে বন্দি করতেই দলটির এমন কৌশলী অবস্থান বলে অনেকে মনে করছেন। তারা মনে করছেন সুশীল সমাজ, সমালোচক, মিডিয়া আপাতত আসন্ন সম্মেলনেই নজর রাখুক, তাই চাইছে আওয়ামী লীগ।
শীর্ষ নেতৃত্বে চমক না থাকলেও সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মিডিয়াও ব্যাপক কাভারেজ দিচ্ছে। নিত্যদিন বৈঠক হচ্ছে দলের বিভিন্ন উপ-কমিটির। কর্মীদের নিয়ে নেতাদের শোডাউনও কম হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে ভূরিভোজও হচ্ছে সম্মেলন প্রস্তুতি সভায়। সম্মেলনের আয়োজন এবার ব্যাপক। নির্বাচনের আগে হওয়ায় এ সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বও পাচ্ছে। প্রস্তুতিও অনেকটাই এগিয়ে।
কিন্তু সম্মেলনের সব আয়োজন যেন হোঁচট খাচ্ছে সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজার বেঁচে থাকার আকুতি আর তার পরিবারের আহাজারিতে। সম্মেলন রেখে রাজনীতি এখন খাদিজাতে আটকা। মিডিয়াও তাই। সম্মেলনের আগে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীর এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আওয়ামী লীগের জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়। আলো ফোটার আগেই সম্মেলনের বাতিঘরে যেন আঁধার নামিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডার বদরুল।
এদিকে এমন সমালোচনার আগুনে ঘি ঢেলেছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের মহিলা এক সংসদ সদস্য। মারাত্মক আহত খাদিজাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সেলফি তুলে তা নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে সংসদ সদস্য সাবিনা আকতার তুহিনের বিরুদ্ধে। এমন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে ছবি তুলে জানান দেওয়া নোংরা রাজনীতিরই নামান্তর বলে অনেকের মত।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, ‘সম্মেলনের আগে এমন ঘটনা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। সব যেন ফিকে হয়ে গেল। একটি ঘটনা নিয়ে এমন সমালোচনা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এটি দল এবং সরকারের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গল নয় বলে মনে করি।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খাদিজার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অপরাধীর কঠিন শাস্তি দাবি করছি। তবে এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ সংগঠন এ ধরনের ঘটনা কখনই ধারণ করে না। ফলে এর সঙ্গে দলীয় রাজনীতির কোনো সম্পর্ক ন্ইে। যেহেতু ঘটনাটি ব্যক্তিগত জের থেকে, সুতরাং আসন্ন সম্মেলনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। সম্পাদনা : মাহমুদুল আলম