ইমরুল শাহেদ : বিগত তিন মাসের আন্দোলনে জম্মু-কাশ্মীরের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি রুপির। বিক্ষোভ, কারফিউ, সংঘর্ষ, দোকানপাট বন্ধ ও ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে যাওয়ায় এই ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দৈনিক গ্রেটার কাশ্মীর। কাশ্মীর উপত্যকার ব্যবসায়ীদের পিঠ বলতে গেলে এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের হিসাব মতে, সেখানে প্রতিদিন আর্থিক-ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি রুপি করে।
এই আন্দোলন শুরু হয়েছে গত ৮ জুলাই দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগে বুরহান ওয়ানীর নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে। তিন মাসের বিক্ষোভ-আন্দোলনে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৯০ জন। পুলিশ গ্রেফতার করেছে আন্দোলনরত সাত হাজার তরুণকে। এফআইআর হয়েছে দুই হাজার তিনশ। গ্রেটার কাশ্মীর জানিয়েছে, এরমধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ, পুলওয়ামা, শফিয়ান, কুলগাম ও ওয়ান্তিপোরা থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে চার হাজার তরুণকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু বিক্ষোভ প্রদর্শন ও পাথর ছোড়ার জন্য কুপওয়ারা, বারামুল্লা, বান্ধিপোরা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই হাজার তরুণকে।
তবে সরকারিভাবে বলা হয়েছে, শ্রীনগর, বুদগাম ও মধ্য কাশ্মীরের গ্যান্ডারবল জেলা থেকে এক হাজার তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এসপি ভাঈদ বলেছেন, এ গ্রেফতারি অভিযান চলতে থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কাশ্মীরের বিভিন্ন থানায় গত তিন মাসে ২৩০০ এফআইআর রেজিস্ট্রি করেছি।’ সম্ভবত ৪৩১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯২৫ জন জেলে আছে। বাকিরা জামিনে ছাড়া পেয়েছে।
এই যখন পরিস্থিতি তখন আন্দোলনের নেতারা বলেছিলেন, অন্তত বিকালের দিকটায় দোকানপাট খোলা রাখা যেতে পারে, বিশেষ করে মুদির দোকান। কিন্তু সেটাও হয়নি। বেশিরভাগ বড় ব্যবসায়ীই তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। এমনকি ঈদুল আজহার সময়ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। দোকানপাট বন্ধ থাকে ও কারফিউ জারি থাকে।
খাসির মাংস বিক্রেতারা বলেছেন, এ পরিস্থিতির কারণে কুরবানির পরিমাণ ৮০ শতাংশই কমে গেছে। বাতিল হয়ে গেছে পাঁচ হাজার বিয়ের অনুষ্ঠান। মাংস বিক্রেতারা এজন্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মার্কেট পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, যানবাহন ও পর্যটনশিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি হিসাবেই পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে তিন হাজার কোটি রুপি।
বিগত তিন মাসের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে কাশ্মীর ইকোনমিক অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন খান বলেছেন, ‘কাশ্মীরের গণমানুষ সবচেয়ে বেশি অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। যা আগে কখনো শোনা যায়নি।’ সম্পাদনা : মাহমুদুল আলম