আমার ভার্চ্যুয়াল ‘ছায়াসঙ্গী’র জন্য ভাবনা ১
কাকন রেজা
আমার একজন ভার্চ্যুয়াল ‘ছায়াসঙ্গী’ কারো ভাষায় ‘বন্ধু’ যিনি সাংবাদিকতায় আছেন এবং একটি গণমাধ্যমের বিনোদন ‘বিট’এ কাজ করেন। চমৎকার সব ছবি সহযোগে করা তার রিপোর্টিংয়ের ধরনটি চমৎকার।
আমি নিজে ছবি কিংবা নাটক বলতে গেলে দেখিই না। হলে গিয়ে ছবি শেষ কবে দেখেছি মনে নেই, আর টেলিভিশনের সামনে বসলে বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই নিজের দেশগত অবস্থান নিয়ে। বিভ্রান্তি নিয়ে কোনোকিছু দেখতে ভালো লাগে না, তাই প্রায় দেখা হয় না। দেখার মধ্যে খবরটাই। তবে টেলিভিশন ও সিনেমা তথা পর্দার জগতের মানুষের সঙ্গে পরিচয় সেই ‘ছায়াসঙ্গী’র রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমেই।
কদিন ধরে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মনে। এই সাংবাদিক মানুষটি যখন নায়ক, নায়িকাদের কিংবা কোনো সেলিব্রেটির ছবি তোলেন এবং প্রকাশ করেন তখন কি লিখিত অনুমতি নিয়ে করেন? সাংবাদিকদের সঙ্গে অন্যের সম্পর্ককে আমার আরেক সাংবাদিক বন্ধু বলেন, ‘কচু পাতার পানি’। সুতরাং যেকোনো সময় ভেঙে যাবার আশঙ্কা আছে এমন সম্পর্ক নিয়ে সমস্যা হতেই পারে।
ছবি প্রকাশ বা প্রচার বিষয়ে যে কঠিন বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাতে তো আমার এই ছায়াসঙ্গীর জন্য কিংবা অন্যদের ভাষায় বন্ধুটিকে নিয়ে ভয়-ই হয়। আজ হয়তো কোনো সেলিব্রেটির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। কাল হয়তো সেই সেলিব্রেটিই বলবে, ‘আমার ওই (?!) বের করা ছবিটি বিনা অনুমতিতে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রকাশ ও প্রচার করে আমার সম্মান(!) এবং শ্লীলতাহানির(?) চেষ্টা করেছেন ওই সাংবাদিক, আমি তার প্রতিকার চাই’! তখন?
যেহেতু সংবাদের কারণেই একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এমন কারও সম্পর্ক তৈরি হয় এবং ভাঙে সেহেতু ভয় তো হতেই পারে।
‘ছায়াসঙ্গী’ বলার বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে নিই। আমাদের সংস্কৃতিতে ‘বন্ধু’ শব্দটির অর্থের ব্যাপকতা অনেক। আমাদের ভূখ-ে ‘বন্ধু’ মানে জীবনের একটি অংশ। কিন্তু পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ‘বন্ধু’ মানে এই পরিচিত ‘একটা কিছু’। যেমন তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক। ইচ্ছা হলো একসঙ্গে, না হলে ভিন্ন পথে। আর আমাদের কাছে স্ত্রী মানে অর্ধাঙ্গীনি, নিজের সবকিছুর অর্ধাংশ। সুতরাং ভার্চ্যুয়াল জগতের সম্পর্ককে আমি ঠিক বন্ধুত্ব বলতে নারাজ। এই ‘সম্পর্ক’ হতে পারে ‘বন্ধুত্ব’ গড়ার একটি সিঁড়ি। তাই আমি এ সম্পর্ককে বলি ‘ছায়াসঙ্গ’। আর সম্পর্কিতরা ‘ছায়াসঙ্গী’। অবশ্য এটা আমার একান্ত নিজস্ব মত।
টেলিভিশনের সামনে বসলে কেন বিভ্রান্তিতে পড়ি তারও একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। এবারের ঈদুল আযহায় টেলিভিশনের সামনে বসলাম। দেশি চ্যানেলে একটি নাটক চলছিল। হঠাৎ খেয়াল করলাম, নাটকের ভাষা আমি বুঝতে পারছি না, বেশির ভাগ কথাই হচ্ছে বিজাতীয় অর্থাৎ হিন্দিতে। এমনিতেই হিন্দি চ্যানেলগুলোর অত্যাচারে ত্যক্তবিরক্ত অবস্থা। এসব চ্যানেল প্রসবিত হিন্দির দাপটে ক্রমেই বাংলা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে নিজ দেশের চ্যানেলেও যদি হিন্দি জায়গা করে নেয় তাহলে ‘মা’ আর ঠেকায় কে!
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট / সম্পাদনা: আশিক রহমান