গল্পটা শুনেছিলাম শেখ হাসিনার কাছ থেকে
আশীফ এন্তাজ রবি
একজন নদীতে পড়ে গেছে। সাঁতার না জানার কারণে সে ডুবে যাচ্ছে। অনেক মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ উদ্ধার করতে নামছে না। এমন সময় এক অসম সাহসী মানুষ নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সাঁতরে গিয়ে ডুবন্ত মানুষটিকে উদ্ধার করল। তীরে উঠার পর সবাই লোকটিকে সংবর্ধনা দিচ্ছে। তখন লোকটি একটি চমৎকার কথা বলল। সে ইচ্ছে করে নদীতে ঝাঁপ দেয়নি, কেউ একজন পেছন থেকে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিয়েছে। তারপর সে বাধ্য হয়ে আর্ত মানুষটিকে উদ্ধার করেছে।
এই গল্পটা যখন শেখ হাসিনা করেছিলেন, তখন তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আসনে খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনা গল্পটি বলেছিলেন সংসদে দাঁড়িয়ে। চমৎকার একটি হাসি দিয়ে তিনি গল্পটার ইতি টেনেছিলেন এভাবে, আমরা সরকারের সমালোচনা করেই যাব। যতক্ষণ পর্যন্ত না লাইনে আসছে, আমরা ধাক্কাব, ধাক্কা মেরেই যাব। সবাই টেবিল চাপড়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন দুর্দান্ত উপমামূলক একটি বক্তব্য রাখার জন্য।
আজ থেকে এক মাস ৬ দিন আগে ফেসবুকে আমরা একটি লেখা দিয়েছিলাম। খুলনার সরকারি হাসপাতালে একটি মেশিন নষ্ট হয়ে আছে। ব্লাড ক্যান্সার রোগীদের জন্য এই মেশিনটি প্রাণভোমরা স্বরূপ। এটি দিয়ে রক্ত পরিশুদ্ধ করা যায়। মাত্র এক লাখ টাকার জন্য মেশিনটি ঠিক হচ্ছে না। তবে এক লাখ টাকা বড় কথা নয়, মেশিনটি ঠিক না হওয়ার পেছনে হয়তো আরও নিগুঢ় কোনো কারণ আছে। প্রিয় প্রধানমন্ত্রী দিয়ে সেই পোস্টটির সম্বোধন করা হয়েছিল, এই ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছিলাম আমরা। কয়েক হাজার মানুষ সেই পোস্টটি শেয়ার করেছিলেন।
আরও আনন্দের বিষয়, ফেসবুকে ব্যাপারটি প্রকাশিত হবার পর কয়েকটি নামকরা পত্রিকা যেমনÑ প্রথম আলো, তারা এর উপরে সংবাদও করেছিলেন।
অবশ্য অনেকেই বলছিলেন, এসব ফেসবুক বিপ্লব করে লাভ নেই, কিচ্ছু হবে না।
গতকাল থেকে মিষ্টি মধুর ইনবক্স পাচ্ছি। খুলনার মানুষজন জানালেন গতকাল থেকে মেশিনটি ঠিক হয়েছে। কাজেই কখনও হাল ছেড়ে দিবেন না। আমাদের সামর্থ্য খুবই সীমিত। হয়তো ফেসবুকে একটা ছোট্ট স্ট্যাটাস লেখার বাইরে আর কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই। যদি তাই হয়, তাহলে অতটুকুই করুন। লিখুন, বলুন, শেয়ার করুন। কোনো অন্যায়, কোনো অনিয়ম, কোনো সমস্যা যেন আনপানিশড না যায়। হৃদয়ের সবটুকু শক্তি দিয়ে চিৎকার করুন। যত ছোটই হোক না কেন, আমাদের সম্মিলিত আহাজারি একটি মূল্য অবশ্যই আছে। এভাবেই আস্তে আস্তে দিন বদলাবে। সব সমাজেই অনিয়ম আছে, কিন্তু যে সমাজে সেই অনিয়মের বিরুদ্ধে মানুষ সোচ্চার না, সেই সমাজ কখনও বদলাবে না। কাজেই চিৎকার জারি রাখুন। সবার জন্য ভালোবাসা। আন্তরিক ধন্যবাদ সরকার এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে।
লেখক: সাংবাদিক ও সঞ্চালক