তীব্র মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে হাইতি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হাইতির সিভিল প্রটেকশন এজেন্সির দেওয়া শেষ খবর অনুযায়ী, হ্যারিকেন ম্যাথিউয়ের আঘাতে হাইতিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ শতাধিক। এ সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে আশঙ্কার দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, হ্যারিকেন পরবর্তী সময়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশটিতে খাদ্য ও পরিবেশগত বিপর্যয় বড় আকার ধারণ করতে পারে। দেখা দিতে পারে ভয়াবহ মানবিক সংকট। সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স
হাইতির দুযোর্গবিধ্বস্ত এলাকার কর্তাব্যক্তিরা ইতোমধ্যে বিশ্ব গণমাধ্যমে তাদের এ আশঙ্কার কথা বর্ণনা করেছেন। তাদের আশঙ্কা, রাস্তাঘাট, সেতু ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় আর্তদের কাছে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত হাইতি দূতাবাসের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান অ্যারিয়েল ডোমিনিক ইতোমধ্যে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানিয়েছেন, রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্স, পেটি গোভ এলাকার নদীর যে সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে, ওই সেতুটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর ফল হবে ভয়াবহ। এতে আর্তদের কাছে ত্রাণ সরবরাহ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সমস্যাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে যে ব্যাপারটি, তা হলো, হাইতির এ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উর্বর মাটি সবচেয়ে বেশি ফসল ফলাতো এবং এসব ফসল, ফসলি মাঠসহ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ডোমিনিক জানান, ইতোমধ্যে সরকারি উদ্যোগে যোগাযোগব্যবস্থা কিছুটা হলেও চলনক্ষম করে তুলতে অবিরত খেটে চলেছে স্বেচ্ছাসেবী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী। ম্যাথিউর আঘাতে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হাইতির আরেক শহর শান্তালের ডেপুটি মেয়র মার্ক সোনিয়েল নোয়েলসহ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবতাবাদী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের আঞ্চলিক পরিচালক জন হাসে সিএনএনের কাছে মত প্রকাশ করতে গিয়ে খাদ্য সমস্যার কথাই তুলে এনেছেন। তারা জানান, হাইতিতে মানবিক সমস্যাকে প্রকটতর করে তুলবে তীব্র খাদ্যসংকট।
সোনিয়েল নোয়েল ভীষণ হতাশায় বলেন, ‘যেন অকূল পাথারে পড়েছি। সব ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে সব ফলের গাছ। কিভাবে কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’ জন হাসে জানান, হাইতির যে দক্ষিণাঞ্চল প্রধান খাদ্য উৎপাদক অঞ্চল হিসেবে দেশজুড়ে স্বীকৃত, সেটিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তীব্র খাদ্যসংকটের সূত্র ধরে দেশটিতে দ্রব্যের বিনিময়মূল্যের তীব্র অস্থিতিশীলতা থেকে শুরু করে সহিংসতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। একটা দেশের গোটা ব্যবস্থাপনাকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা সরেজমিন পরিদর্শনে দেখেছেন, সেতুসহ, সাধারণ রাস্তা ঝড়ে, মধ্যপথে গাছ পড়ে ভীষণরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেইসঙ্গে দুর্গম হয়ে উঠেছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে বানের পানি, দূষিত করে তুলেছে সুপেয়পানির যত আধার। এ ধরনের জলোচ্ছ্বাসের পর মহামারি হয়ে পানিবাহিত যে রোগগুলো দেখা দেয়, ওগুলোর জন্য বেশ অনুকূল পরিবেশ ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণস্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন পার্টনার্স ইন হেলথের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, হাইতিতে কলেরা সংক্রমণ এ ধাক্কায় বহুগুণে প্রকট হয়ে উঠতে পারে। সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১২ সালের হ্যারিকেন স্যান্ডির পর হাইতিতে কলেরার যে প্রকোপ দেখা দিয়েছিল তা আজ অব্দি বজায় আছে। এক্ষেত্রে নতুন করে ম্যাথিউর আক্রমণে রোগের সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে।
হাইতিতে সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার করে জয়েন্ট টাস্কফোর্সের কমান্ডার ও দেশটির নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল সেড্রিক প্রিঙ্গল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, শনিবার নাগাদ ৩৫০ সেনাসদস্য আর্তের সেবায় হাইতিতে উপস্থিত থাকবে। হাইতির দুর্গতদের সহায়তায় নেদারল্যান্ড ও ফ্রান্স ত্রাণবাহী নৌবহর পাঠাবে। পাঠাতে পারে যুক্তরাজ্যও। শুক্রবার হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
হাইতির সিভিল প্রটেকশন অথরিটির দেওয়া তথ্য মতে, এ মুহূর্তে দেশটির প্রায় সাড়ে ৩ লাখ আর্ত মানুষের সার্বিক সহায়তা প্রয়োজন, যাদের মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ মানুষকে প্রায় ২শ আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ