সুইডেন যেভাবে জিহাদি ‘রপ্তানিকারক’ হচ্ছে
নূসরাত জাহান : শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সুইডেনের পরিচিত রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর দলে দলে লোকজন সুইডেনে আশ্রয় নিতে শুরু করে। অনেকে অবশ্য এরইমধ্যে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তবে এসব শরণার্থীই সুইডেনে বুনে গেছে জিহাদের বীজ। শুধু সুইডেন থেকেই ৩০০ জিহাদি ইরাক ও সিরিয়ায় গেছে। বলা হচ্ছে, সুইডেনই একমাত্র ইউরোপীয় দেশ যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি জিহাদি ‘রপ্তানি’ হয়।
গুটেনবার্গের বাসিন্দা ২৩ বছরের সারা। পশ্চিমা অন্য মেয়েদের মতই তার বেশভুষা ও সাজগোজ একই রকম। টাইট জিনস পরা, হাতে কয়েকটি ট্যাঁটু আঁকা। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি জিহাদে অংশ নিতে স্বামীর সঙ্গে গিয়েছিলেন সিরিয়ায়। স্বামী মারা যাওয়া পর সম্প্রতি সিরিয়ার রাকা নগরী থেকে তিনি সুইডেনে ফিরে আসেন।
সারাই বর্ণনা করলেন আইএস জঙ্গিদের বীভৎসতা। তিনি বলেন, আমার পাশের ঘরে ইয়াজিদি নারীদের ধর্ষণ করা হতো। আমি তাদের চিৎকার শুনেছি। মাঝে-মধ্যেই লোকজনকে হত্যা করা হতো। এছাড়া তো রয়েছে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ।
তিনি বলেন, ‘জর্দানের এক পাইলটকে হত্যার পর আমি তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কেন তারা একজন জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করল? এটা কি ইসলামের দৃষ্টিতে ঠিক? আমি যতদূর জানি ইসলামে কাউকে পুড়িয়ে মারার বিধান নেই।’ কোনো জবাব তিনি পাননি।
সারা বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক বিষয়ে তিনি পরিবর্তন দেখতে পান। পরে এক জিহাদির সহায়তায় তুরস্কের সীমান্তে পৌঁছেন। সেখান থেকে সুইডেন আসেন।
সারা আরও বলেন, আপনি যখন এমন জীবনের মধ্য দিয়ে যাবেন তখন আর কিছুই আপনার সামনে অর্থবহ হবে না। তখন চিন্তা থাকে কত দ্রুত বেহেশতে যাওয়া যায়।
শিল্প কারখানার জন্য পরিচিত গুটেনবার্গে ৫ লাখ মানুষের বাস। এ এলাকায় সবচেয়ে বেশি অভিবাসীদের বাস। যাদের বেশিরভাগই মুসলমান। এ নগরী থেকে কমপক্ষে ১০০ নারী ও পুরুষ জিহাদ করতে গেছে। সুইডেনে রয়েছে চরম আবাসিক সংকট। এছাড়া লাগামহীন বাড়িভাড়া। এ পরিস্থিতিতে গত বছর তারা এক লাখ ৬০ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। ফলে সার্বিক দিকে লক্ষ্য রাখা পুলিশের জন্য বেশ কঠিন। এতে করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নাজুক হয়ে পড়েছে।
এছাড়া ১৫ বছরের আগেই প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিশুই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সুইডেনে বেকারত্বের হার ১১ শতাংশ। কাজেই আশার কথা বলে এসব তরুণ জনগোষ্ঠীকে জঙ্গি দলে ভেড়ানোও সহজ হয়।
আইএস কীভাবে তরুণদের প্রভাবিত করে এ সম্পর্কে ইমরান নামে এক যুবক বলেন, ‘বাবা বা বড় ভাইয়ের মতো কেউ এসে বলল, মাদক গ্রহণ করো না। কাউকে আঘাত করো না। এর বদলে আমাদের সঙ্গে এসো, আল্লাহর পথে লড়াই করো। মুসলমানদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করো। মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। তোমরা সময় নষ্ট করছ। সুইডেনের লোকজন তোমাদের কিছু দিতে পারবে না। এসব কথা শুনে তরুণরা সহজেই আকৃষ্ট হয়ে যায় এবং জিহাদে যোগ দেয়।’
ইমরান নিজেও আইএসে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। পরে আইএসের বর্বরতার ভিডিও ও ছবি দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
আঞ্চলিক পুলিশপ্রধান কালাস ফেরিবার্গ বলেন, কর্তৃপক্ষ সমস্যা সম্পর্কে অবগত। এটাও আমরা জানিÑ কোন কোন এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে তরুণ অভিবাসীদের অনেকেই সাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী। আমি বুঝতে পারি না, গুটেনবার্গের মতো উন্নত এলাকা থেকে কেন কেউ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যায় যুদ্ধ করতে। এখন অনেকে বলেন, তারা নিজেদের সুইডিশ বলে ভাবতে পারেন না। এর মানে কি তবে সুইডেনের বহুসংস্কৃতির সমাজ গড়ে তোলার চিন্তা ব্যর্থ? সূত্র : বিবিসি। এফএ। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী