হাসান আরিফ, যশোরের বেনাপোল থেকে ফিরে: দুর্গাপূজার ছুটিতে বাংলাদেশে বেড়াতে আশা ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা অন্যান্য বারের চেয়ে বেড়েছে। এসব পর্যটকের অধিকাংশই কলকাতার বাসিন্দা। বাংলাদেশ উপদূতাবাস জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে পর্যটক ভিসা দেওয়ার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে যারা বাংলাদেশ ঘুরতে আসছেন, তাদের প্রায় সবারই আদি বাড়ি বাংলাদেশেই। নিজেদের ফেলে আসা দেশ দেখতেও তাদের আগ্রহের একটা বড় কারণ। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সহায়তা করেছেন যশোর প্রতিনিধি জাহিদুল কবীর মিলটন।
বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পূজা উপলক্ষে গত কয়েক দিন এই বন্দর দিয়ে আসা ভ্রমণকারীর সংখ্যা অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক বেশি। আগে গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার পর্যটক আসা-যাওয়া করলেও বর্তমানে এ সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশে আগমনকারীর সংখ্যাই বেশি।
কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাস থেকে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে আমরা ২০ হাজারেরও বেশি ভিসা দিয়েছি। পূজার ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য দুটির জায়গায় চারটি কাউন্টার খুলতে হয়েছে। এই যে বাড়তি ভিসা দেওয়া হচ্ছে, এগুলো সবই পর্যটন ভিসা।
বেনাপোল বন্দরে সরেজমিন দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য ভারতীয় অংশে অনেক লম্বা লাইন দিয়ে পর্যটকরা দাঁড়িয়ে আছেন। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যেই কর্মতৎপরতা দেখা গেছে। এর মধ্যেই কিছু দালাল নানা ধরনের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে বিজিবি আর পুলিশের নজরদারিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
সপরিবারে বাংলাদেশে এসেছেন সৌমিত্র দস্তিদার। তিনি বলেন, বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছি, কিন্তু দুর্গাপূজাটা কখনও দেখা হয়নি। সেজন্যই এ সময়ে যাওয়া। রাজশাহীর কাছে তাহেরপুরে রাজা কংস নারায়ন সার্বজনীন পূজার প্রথম প্রচলন করেছিলেন। সেটা দেখার জন্য তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে, তাই প্রথমে রাজশাহীই যাবেন তিনি।
আরেক পর্যকট অজয় রায় জানান, বাংলাদেশে আমার আপনজনরা রয়েছে। তাছাড়া এই দেশে পূজার আমেজ অনেক বেশি তাই পূজার ছুটির সময়টা বাংলাদেশেই থাকতে চান তিনি। আর যশোরে পূজার আনন্দটা একটু আলাদা। যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার যেসব পর্যটন সংস্থা বাংলাদেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা করে, সেরকমই একটি সংস্থার কর্ণধার সুব্রত দেব জানিয়েছেন, তাদের কাছে একশটা ফোন এলে অন্তত ৫ শতাংশ মানুষ বাংলাদেশ ভ্রমণের ব্যাপারে জানতে চাইছেন।
আরেক পর্যটন সংস্থার মালিক অলোক ম-ল জানান, আগে তো বাংলাদেশের ব্যাপারে কেউই খোঁজ করত না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অবস্থাটা পাল্টে গেছে। এবছরও তারা ২৫ জনের একটা দলকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন পূজা উপলক্ষে।
কলকাতায় বাংলাদেশ দূতাবাসের হেড অফ চ্যান্সারি মিঞাঁ মুহম্মদ মইনুল কবীর জানিয়েছেন, বছরের অন্য সময়ে যেখানে প্রতিদিন গড়ে চারশ ভিসা দেওয়া হয় সেখানে এখন গড়ে আট থেকে এক হাজার ভিসা দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন।
উপরাষ্ট্রদূতাবাস বলেছে, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল গত বুধবার, যাতে রাত আটটা পর্যন্তও ভিসা নেওয়ার জন্য মানুষের ভিড় লেগে ছিল। সম্পাদনা: মাহমুদুল আলম