মাহমুদুল আলম : শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিন আজ রোববার সকাল ১০টায় রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এক বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ চিন্তা করে সনাতনধর্মীরা তাকে ‘দেবী’ জ্ঞানে এই পূজা করবেন। জানতে চাইলে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, আগামীকাল (আজ রোববার) কুমারী পূজা। এরই মধ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কুমারী পূজা কেন করে? শ্রীরামকৃষ্ণের ‘কথামৃতে’ বলা আছেÑ ‘সব স্ত্রী লোক ভগবতীর এক-একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ’। প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে মেয়েটির নাম এবং পরিচয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে প্রকাশ করা হয় না। সব নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার লক্ষ্য। আজ সকালে নির্দিষ্ট কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হবে। ফুলের মালা, চন্দন ও নানা অলংকার-প্রসাধন উপাচারে নিপুণ সাজে সাজানো হবে তাকে।
দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল ছিল মহাসপ্তমী। এদিন ত্রি-নয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন শেষে দেবীর মহাসপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজাশেষে যথারীতি অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতির আয়োজন ছিল। বিশেষ রীতি অনুসারে দুর্গা দেবীকে স্নান করানো হয়। আয়নায় দুর্গার প্রতিবিম্বে ধর্মীয় বিশেষ রীতিতে দেবীকে স্নান করানোর পর বস্ত্র ও নানা উপচারে মায়ের পূজা হয়।
গতকাল থেকে মন্দিরগুলোতে দেবী দর্শনের জন্য ভিড় জমে। হাজার হাজার ভক্ত-দর্শনার্থী রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির, জগন্নাথ হল, শাঁখারিবাজারসহ বিভিন্ন মন্দিরে দুর্গাদেবীকে দর্শন ও প্রার্থনায় সমবেত হন। মুখরিত হয়ে উঠে প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গণ।
মাতৃকাশক্তির বীজরূপা হচ্ছে বালিকা। পুণ্যার্থীরা কুমারী মায়ের সামনে প্রার্থনায় সমবেত হবেন। এ উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মিশন ও এর আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন ছাড়াও বিভাগীয় শহরগুলোতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। অবিবাহিত ব্রাহ্মণকন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে। বয়স ভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। এ দিন নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। হাতে দেওয়া হয় ফুল, কপালে সিঁদুর এবং পায়ে আলতা। ঠিক সময়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা করা হয়। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ১৬টি উপাদানে দেবীর পূজা হয়। সেই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে দেবীর পূজা করেন ভক্তরা।
১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে ৯ কুমারী পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। আগামীকাল সোমবার মহানবমী ও বিজয়া দশমী অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ পরের দিন মঙ্গলবার প্রতিমা বিসর্জন। সম্পাদনা : রিকু আমির