কে এই মেজর জিয়া?
আজাদ হোসেন সুমন: সেনাবাহিনীতে থাকাকালে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি মেজর জিয়া মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ধনকুবেরের সহায়তায় সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেন। ষড়যন্ত্র বানচাল হলে তিনি পালিয়ে যান এবং চাকরিচ্যুত হন। এরপর আত্মগোপনে চলে যান জিয়া। শুরুর দিকে ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে কয়েক দিন আত্মগোপন করে ছিলেন তিনি। এরপর কখনো চট্টগ্রাম, কখনো রাঙামাটি, কখনো টেকনাফ-কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিয়ে থেকে সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে যান বরখাস্ত হওয়া এই সেনা কর্মকর্তা। গোয়েন্দা সংস্থার কাউন্টার সার্ভিল্যান্সের বিস্তারিত কৌশল তার জানা থাকায় এখনো তিনি নিজেকে আড়ালে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
পুলিশ ও র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যমতে, একসময় ঢাকার বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে ছিলেন জিয়া। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাওহীদের নেতাকর্মীদের বাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মেস, এমনকি বস্তিতেও থেকেছেন তিনি। সেনা অভুত্থ্যানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর জিয়া সাত দিন আত্মগোপনে ছিলেন মধ্যবাড্ডার এক বাসায়।
এরপর জসিমউদ্দিন রাহমানী ও পুরান ঢাকার একটি মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ডেন্টের হাত ধরেই আনসারুল্লাহ বাংলাটিমে যোগ দেন সৈয়দ জিয়াউল হক। জসিমউদ্দিন রাহমানী গ্রেফতারের পর ২০১৪ সালে আল-কায়েদা নেতা আইমান আল জাওয়াহিরি ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট (একিউআইএস) নামে নতুন একটি শাখার ঘোষণা দেয়ার পর আনসারুল্লাহ বাংলাটিম তাদের নাম পরিবর্তন করে আনসার আল ইসলাম নামে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। সংগঠনের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ, আইটি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার এবং ও মোটিভেশন সব কিছু পরিচালনা করেছেন তিনি। বিশেষ করে সংগঠনটির সদস্যদের কোনো নাশকতামূলক অপারেশনে পাঠানোর আগে অনুপ্রেরণার দায়িত্ব পালন করতেন জিয়া। সংগঠনটির সদস্যদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য তিনি বলতেন, জিহাদের পথ অনেক শক্ত পথ। আমি খুবই ভালো অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু জিহাদের জন্য আমি সবকিছু ত্যাগ করেছি। আমি চাইলে বিলাসী জীবন বেছে নিতে পারতাম। কিন্তু আমি এত ত্যাগ করে এখানে এসেছি। তোমাদেরও সবকিছু ত্যাগ করতে হবে। প্রয়োজনে পরিবারও। আমি পারলে তোমরাও পারবে।
দেশের বিভিন্নস্থান থেকে সমমনা তরুণ যুবকদের এনে ঢাকা এবং আশাপাশ এলাকার আস্তানায় মাসের পর মাস রেখে ব্রেনওয়াশ করেছেন এই জিয়া। তাদেরকে শিখানো হয়েছে। জেহাদ করতে হবে ইসলামের অপর নাম হচ্ছে জিহাদ। জিহাদের মাধ্যমে এই নাস্তিক তাগুদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। কতল করতে হবে ইসলামের শত্রুদের। আর এই কাফেরদের হত্যা করা পাপ নয়-এটা নেক কাজ। যে যত বেশি কাফের হত্যা করবে সে তত দ্রুত আল্লার সন্তুষ্টি পাবে। আর এই জিহাদ করে যে শহিদ হবে সে সরাসরি বেহেস্তে চলে যাবে। ব্রেনওয়াশের পর প্রায় দেড়শ’ সদস্য নিয়ে ৩০ থেকে ৪০ দূর্ধর্ষ ‘সিøপার সেল’ (গ্রুপ) তৈরি করে সে। প্রতিটি স্লিপার সেলে ৩ থেকে ৪ জন সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। জিয়া নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণায় স্লিপার সেলের সদস্যরা। মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারদের তালিকা তৈরি করে। এরা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগে রেকি করে। যাকে হত্যা করা হবে ওই ব্যক্তি কখন কোথায় থাকে কোন রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। সবকিছু রেকি করার পর তারা হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে অ্যাকশনে যায়। হত্যার ক্ষেত্রে এই স্লিপাসেলের সদস্যদের অ্যাকশন নিখুঁতভাবে পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দিতেন জিয়া। সে অনুযায়ী প্রতিটি ঘটনায় তারা পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে শিকারকে কাবু করে।
২০১৩ সালে মিরপুরে ব্লগার রাজিবকে হত্যার মধ্যদিয়ে এরা মিশন শুরু করে। ২০১৩-২০১৫ সালের মধ্যে পাঁচজন ব্লগার, একজন প্রকাশক ও সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা জুলহাস মান্নান এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হত্যার পর তদন্তে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে জিয়াউলের নাম উঠে আসে। এই মাস্টারমাইন্ড গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের আওতায় আছে। খুব শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো দাবি করেছে।
এ ব্যাপারে এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক (অপরাধ ব্যাবস্থাপনা) হুমায়ুন কবীর বলেন, মাস্টারমাইন্ড মারজান ও মেজর জিয়া ২ জনকেই গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারা গোয়েন্দা নেটওয়ার্কেই আছে আশা করছি শিগগিরই এদের গ্রেফতার করা যাবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম