দুদকের নজরদারিতে ব্যাংকিং খাত
এস ইসলাম জয়: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বছরের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ৩১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা রয়েছেন ১১২ জন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বিসমিল্লাহ গ্রুপ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় জনতা ব্যাংকের যে দুই উপ-মহাব্যবস্থাপক গ্রেফতার হন, সেই একই মামলার অন্যতম আসামি মো. আবদুস সালাম আজাদ বর্তমানে ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার পদোন্নতিও হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতির ঘটনায় ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী, চেয়ারম্যান নওরিন হাসিব, প্রাইম ব্যাংকের ডিএমডি মো. ইয়াছিন আলীসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ১২টি মামলা দায়ের করে দুদক। তাদের মধ্যে বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি, চেয়ারম্যানসহ ১৩ জন ১২টি মামলার আসামি। বাকিরা বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের ১২ জন, প্রাইম ব্যাংকের ৯ জন, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৭ জন, যমুনা ব্যাংকের ৫ জন এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৮ জন কর্তা-ব্যক্তি রয়েছেন। দুদকের বর্তমান পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তখন রাজধানীর রমনা, মতিঝিল ও নিউমার্কেট থানায় মামলাগুলো করা হয়।
জনতা ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের মোট ৩৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। আসামিরা হলেনÑ জনতা ব্যাংক ভবন করপোরেট শাখার জিএম ও শাখা ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম আজাদ, একই শাখার দুই ডিজিএম আজমুল হক ও এসএম আবু হেনা মোস্তফা কামাল, রপ্তানি বিভাগের কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা (এসইও) সৈয়দ জয়নাল আবেদীন, দুই এজিএম (রপ্তানি) অজয় কুমার ঘোষ ও ফায়েজুর রহমান ভূঁইয়া, ব্যাংকটির মগবাজার শাখার ব্যবস্থাপক রফিকুল আলম, দুই এসইও খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আতিকুর রহমান, এলিফ্যান্ট রোড শাখার এজিএম মোস্তাক আহমদ খান এবং এসইও এস এম শোয়েব-উল-কবীর। এর মধ্যে আজমুল হক ও এস এম আবু হেনা মোস্তফা কামাল এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দুদকের গ্রেফতারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। সংশোধিত নতুন আইনে (২০১৬) মামলার আগেই যে কাউকে গ্রেফতারের আইনি ক্ষমতা পেয়েছে সংস্থাটি। নতুন ক্ষমতাবলে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৬৭২৯টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৪৮২টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্তৃক বাছাই করা হয়েছে। ৩৮৯টি অভিযোগের বিষয়ে আইনানুগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ৫,৮৫৮টি অভিযোগ কমিশনের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তা বাতিল হয়েছে। জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত ১৫২টি দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের মধ্যে ৪১টি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করেছে। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২০৬টি মামলা দায়ের, ৩১৬টি চার্জশিট দাখিলের জন্য এবং ৩০১টি মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে দুদক। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী