ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম দায় এড়াতে পারে না পর্ষদ
হাসান আরিফ: ব্যাংকিং খাতের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একের পর এক গ্রেফতার করায় এই খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একই ভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে এই খাতের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বরং এসব অপরাধের জন্য ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদও দায় এড়াতে পারে না।
দুদকের হিসাব অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বে নতুন কমিশন গঠিত হওয়ার পর ১৯৩ দিনে মোট ৩১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন ৭০ জন এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ৪১ জন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান বলেছেন, এবিবি ও ব্যাংক উদ্যোক্তারা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দেখা করে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। এভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকলে ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসবে, যার প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে। তবে যারা দোষী, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এদিকে আর্থিক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ খাতের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে অভিযানের সুফল পাওয়া যাবে না। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ছোট ও মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তারা গ্রেফতার হলে সেই পর্যায়ে কিছুটা আতঙ্ক ও ভীতি তৈরি হতে পারে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, দুর্নীতি করে সহজে পার পাওয়া যাবে না এবং যেকোনো সময় তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে এ বার্তা দুর্নীতিবাজদের কাছে পৌঁছে গেছে। এতে যারা দুর্নীতি করছেন তারা তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। আর অন্যরাও দুর্নীতি করা থেকে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে দুর্নীতি মুক্ত আর্থিক খাত গড়ে উঠতে সহায়ক হবে।
এ বিষয়ে অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এই প্রতিবেদককে বলেন, দুদক যে অভিযান চালাচ্ছে, সেই অভিযানকে তিনি স্বাগত জানান। কেননা তাদের এই অভিযান সফল হলে এই খাতের অনিয়ম দুর্নীতি দূর হবে।
তার মতে আর্থিক খাতের দুর্নীতিবাজদের ধরলে এই খাত দুর্নীতি মুক্ত হবে। এই খাতের শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে শুধু কর্মকর্তাদের ধরলেই হবে না। এ বিষয়ে ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের কোনো প্রকার ফৌজদারি অপরাধ আছে কি না তাও দুদককে খতিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকেও গ্রেফতার করতে হবে। আর পরিচালনা পর্ষদ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। কারণ বোর্ডে এ নিয়ে আলোচনা হয়। অনুমোদন হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুথপাত্র শুভংকর শাহা বলেন, দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেই পারে। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ বিষয়ে বলেন, আমানতকারীদের টাকা যারা লুটপাট করেছে, তাদের বিষয়ে আগের কমিশন কিছুই করেনি। বর্তমান কমিশন যে এ বিষয়ে সক্রিয় হয়েছে, সে জন্য তাদের স্বাগত জানাই। আর্থিক খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে অবশ্যই এটি ভাল ভূমিকা রাখবে। তবে তাদের সতর্ক হতে হবে, অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। বড় বড় চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের আগে গ্রেফতার করতে হবে। শুধু চুনোপুটিদের ধরলেই হবে না।
সাম্প্রতিক সময়ে দুদকের গ্রেফতারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। অনুসন্ধান পর্যায়েই যে কাউকে গ্রেফতারের আইনি ক্ষমতা পেয়েছে সংস্থাটি। ক্ষমতার প্রয়োগও করছে তারা। দুদকের অভিযান নিয়ে প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও রয়েছে। ব্যাংকাররাও রয়েছেন আতঙ্কে। গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনও রাজউকের দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের সমালোচনা করেছেন।
মামলা ছাড়াই গ্রেফতারের ক্ষমতা: এখন অনুসন্ধান পর্যায়েই সন্দেহভাজন যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে দুদক। আগে এ ক্ষমতা ছিল তদন্ত পর্যায়ে, অর্থাৎ মামলা হওয়ার পর। এ জন্য দুদক আইন, ২০০৪-এর দুটি ধারার সংশোধন করা হয়েছে। গত ২১ জুন সংশোধিত আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়। দুদক আইনে মামলার আগের প্রক্রিয়াকে বলা হয় অনুসন্ধান। আর মামলার পরের কার্যক্রমকে বলা হয় তদন্ত। নতুন এ আইনের ক্ষমতাবলে অনুসন্ধান ও তদন্ত দুই পর্যায়ে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ক্ষমতা থাকবে। সম্পাদনা : মাহমুদুল আলম