রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ বিতরণ ২২৯ প্রকল্পের ৩৪৮ কোটি টাকার হদিস নেই
জাফর আহমদ: ইকুইয়িটি এন্টারপ্র্রেনারশিপ ফান্ডের (ইইএফ) বিতরণ করা ৩৪৮ কোটি টাকার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সময় বিনা সুদে এ সব অর্থ রাজনৈতিক বিবেচনায় বিতরণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব গ্রাহক ঋণ নেওয়ার সময় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছিল। ফলে পাওয়া যাচ্ছে না এসব ঋণ গ্রহিতা প্রতিষ্ঠানকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের (আইসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সাল পর্যন্ত ২২৯টি প্রকল্পের বিপরীতে ৫২৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ৩২টি তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ সম্পর্কিত প্রকল্প ও ১৯৭টি কৃষিভিত্তিক প্রকল্প। এসব ঋণ আট বছর সময়সীমার জন্য বিতরণ করা হয়। শর্ত অনুযায়ী, কোনো উদ্যোক্তা প্রকল্প নির্ধারণ করে প্রাক্কলিত মূলধনের ৫১ শতাংশ দেবে নিজে। আর বাকি ৪৯ শতাংশ মূলধন বিনা সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক সরবরাহ করে। আট বছর সময়-সীমা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা।
তথ্য অনুযায়ী, বিতরণ করা ৫২৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকার তহবিলের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৩৪.০৯ শতাংশ বা ১৮০ কোটি ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি ৩৪৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ফেরত দেয়নি গ্রাহকরা। ফেরত পাওয়া অর্থের মধ্যে ২৭ কোটি ৭২ লাখ তথ্যপ্রযুক্তি খাত ও ৩২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কৃষিভিত্তিক প্রকল্প থেকে ফেরত আসে। অনাদায়ী ৩৪৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকার প্রায় পুরোটাই গ্রহণের সময় সময় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করার কারণে গ্রাহককে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ফোনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে বিস্তারিত তদন্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত করা। তারপর দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঋণ বিতরণের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি ঋণ বিতরণের কাজও করতো। পরবর্তীত নীতিমালা তৈরি ও মূলধন নিয়ন্ত্রণের কাজ বাংলাদেশ ব্যাংক হাতে রেখে পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয় ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনকে (আইসিবি)। আইসিবি এ ঋণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইসিবি ৮৭২টি প্রকল্পের বিপরীতে এক হাজার ৩৪২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বিতরণ করে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইসিটি ও কৃষি খাতের ‘ইনোভেটিভ‘ প্রকল্পে এ ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে তহবিলটি গঠন করা হয়। কিন্তু বিতরণ করা হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। ফলে মৌলিক শিল্পে ব্যবহার করার কথা থাকলেও চলে গেছে রাজনৈতিক কর্মীদের পকেটে। এ কারণে অধিকাংশ টাকা ফেরত আসেনি। তিনি বলেন, ইইএফ-এর অর্থ কম ফেরত আসার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে ইইএফ তহবিল বন্ধ করার প্রস্তাব করেছিল।
এ ব্যাপারে ইইএফ-এর বর্তমান ব্যবস্থাপনাকারী প্রতিষ্ঠান আইসিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইফতেখার উজ্জামান বলেন, তহবিল আদায়ের হার সন্তোষজনক নয়- এর আলোকে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এতে খেলাপিদের বিরুদ্ধে কী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে ব্যাপারেও প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্পাদনা: রিকু আমির