আরও কঠোর থেরেসা মের সরকার অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বেপরোয়া নীতি ঘোষণা
লন্ডন প্রতিনিধি: যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ ত্যাগ করলে ইইউ-বহির্ভূত দেশগুলোর অভিবাসীদের জন্য নিয়ম কিছুটা শিথিল হবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা ছিল অনেকের। কিন্তু গণভোট-পরবর্তী পরিবর্তিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিবাসন নিয়ে যে বক্তব্য দিলেন, তাতে বলা যায় সেই আশার গুঁড়ে বালি।
গত মঙ্গলবার বার্মিংহামে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির দলীয় সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড এক বেপরোয়া অভিবাসন নীতির ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষার্থী (স্টুডেন্ট) ও কর্মী (ওয়ার্ক পারমিট) ভিসায় নতুন কড়াকড়ি আরোপের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই স্থানীয় কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। বিদেশি কর্মী নিয়োগে নতুন শর্ত আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। কোন প্রতিষ্ঠানে কতজন বিদেশি কর্মী কাজ করছেন, তার তালিকা প্রকাশে বাধ্য করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বর্তমান নিয়মে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষে চাকরির আবেদনের যে সুযোগ দেওয়া আছে, তার কড়া সমালোচনা করেন নতুন এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান ও পড়ার বিষয় বিবেচনায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি ভিন্ন ভিন্ন শর্ত আরোপেরও ইঙ্গিত দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর দলীয় সম্মেলনে অ্যাম্বার রাড এই প্রথম অভিবাসন নিয়ে নতুন সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরলেন। বুধবার শেষ হয় কনজারভেটিভ পার্টির চার দিনব্যাপী সম্মেলন। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি দলের প্রথম সম্মেলন। যেখানে থেরেসা মেও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন। মূলত ইইউ নাগরিকদের অবাধ প্রবেশ ঠেকাতে যে গণভোট, সেই গণভোটের রায় কার্যকর করার বিষয়টি প্রাধান্য পায় প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের ভাষণে।
এই সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেরেমি হান্টও স্বাস্থ্য খাতে বিদেশি কর্মী-নির্ভরতা কমিয়ে আনার ঘোষণা দেন। বলেন, যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের এসব কাজের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন যুক্তরাজ্যের মোট অভিবাসন বছরে এক লাখের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। শিক্ষার্থী ও কর্মী ভিসায় নজিরবিহীন কড়াকড়ি আরোপ করেও ক্যামেরনের সরকার ওই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। এ ব্যর্থতার জন্য ইইউ নাগরিকদের অবাধ প্রবেশাধিকারকেই দায়ী করা হয়। এখন থেরেসা মের সরকার বেপরোয়া নীতি গ্রহণ করে ব্রেক্সিট কার্যকরের আগেই অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চায় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশটির বিরোধীদলীয় রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। লেবার পার্টি সরকারের অভিবাসনবিষয়ক পরিকল্পনাকে ‘বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক’ আখ্যায়িত করে বলেছে, থেরেসা মের নেতৃত্বে টোরি পার্টি আবারও তাদের ‘নোংরা’ অতীতে ফিরে যাওয়ার পথ ধরেছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাট, গ্রিন পার্টি এবং ওয়েলসের প্লাইড কামরি যৌথ এক বিবৃতিতে সরকারের অভিবাসনবিষয়ক পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রায় সাত বিলিয়ন পাউন্ডের জোগান দেন। ইতোমধ্যে আরোপিত কড়াকড়ির কারণে গত বছর বিদেশি শিক্ষার্থীর আগমন ১৫ শতাংশ কমে গেছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সরকারের উচিত হবে ভেবেচিন্তে কথা বলা।
ইইউ নাগরিকদের অবাধ প্রবেশাধিকারের বিরোধিতা করে যুক্তরাজ্যের অনেক বাংলাদেশিও ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পাশা খন্দকার বলেন, ব্রেক্সিট চাওয়ার যুক্তি ছিল একটি মানবিক অভিবাসননীতি হবে। ইইউ কিংবা ইইউর বাইরের সবার জন্য সমান নিয়ম থাকবে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তীব্র নিন্দনীয়। মানবিক অভিবাসননীতির পক্ষে তারা জোর তৎপরতা চালিয়ে যাবেন বলে জানান। প্রথম আলো