পুরান ঢাকার শিংটোলা পঞ্চায়েত কল্যাণ পরিষদের বেহাল দশা
নিজস্ব প্রতিবেদক: পুরান ঢাকার দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী পঞ্চায়েত প্রথার বদনাম কুড়াতে বসেছে শিংটোলা পঞ্চায়েত কল্যাণ পরিষদ। পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদকের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ উঠেছে।
এই সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর চালানো হয় নির্যাতন ও নিপীড়ন। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও তাদের অত্যাচারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার জোরে সাধারণ সম্পাদক ১৫ বছর ধরে স্ব-পদে বহাল রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিংটোলার প্রতাপ দাস লেন, গোপাল সাহা লেন এবং পি সি ব্যানার্জি লেনের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জানা গেছে, পুরান ঢাকায় প্রায় এক হাজার পঞ্চায়েত রয়েছে। বিশ বছর আগে সরকারি জায়গায় তিন তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়। সেখানে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। ভবনের নিচ তলায় কাগজের পট্টি এবং তৃতীয় তলায় বিয়ে-বাদকের কার্ডের কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। ২য় তলায় অফিস তালা বদ্ধ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দুই কারখানা থেকে মাসে ১৪ হাজার টাকা ভাড়া এবং সভাপতির অনুমতি ও স্বাক্ষর ছাড়াই প্রায় তিন লাখ টাকা উত্তোলন করে সিন্ডিকেটের পকেটস্থ করা হচ্ছে। বিগত দিনের আয়-ব্যয়ের হিসাবেরও কোনো হদিস নেই। সিন্ডিকেটের এহেন কর্মকা-ে সভাপতি পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন ডাঃ সাদত আলী শিকদার।
পঞ্চায়েত কমিটি সংশ্লিষ্টরা জানান, পঞ্চায়েত কমিটিকে পুঁজি করে সাধারণ সম্পাদক কাওসার মিয়া সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তারা এলাকায় চাঁদাবাজি দখলবাজিতে মেতে উঠেছে। কেউ বাড়ি বানালে তাদেরকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। ভুক্তভোগিরা অভিযোগে জানান, ১৮/১ লেনের বাড়িওয়ালা নাসিম মিয়ার ২ ফুট বাই ৯০ ফুট দেয়াল ক্ষমতার জোরে দখল করেছে কাওসার সিন্ডিকেট। ২১নং প্রতাপ দাস লেনের বাড়িওয়ালার এজমালী স্যুয়ারেজের ৩ ফুট বাই ৮০ ফুট রাস্তাও দখল করে নেয়া হয়েছে। ১৫/১৬ নং প্রতাপ দাস লেনের ফকির বাড়ির মো. আমিন মিয়ার ১টি রুম দখলের পর ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ১৯ নং প্রতাপ দাস লেনের বাড়ির সাথের সরকারি রাস্তার প্রায় ৩ ফুট বাই ৮০ ফুট রাস্তা দখলের পর কাওসার নিজের নামে নামজারি করে নিয়েছে। ২১/১নং প্রতাপ দাস লেনের নূরু মিয়ার বাড়িটি কেনার সময় তার কাছ থেকে পঞ্চায়েতের কথা বলে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় কাওসার মিয়া। ১নং প্রতাপ দাস লেনের লুৎফর রহমানের বাড়ি কেনার সময় একই ভাবে প্রায় ৫লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে কাওসার। ১৭ নং পি সি ব্যানার্জি লেনের সহিদ মিয়ার বাড়ির ডেভেলপার খারেজের নিকট হতে মসজিদে বসে কাওসার মিয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রায় ৬লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আছে। ১৮/১নং প্রতাপ দাস লেনের বাড়িওয়ালা জামিল জানান, আমার মেয়ের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা লোন হিসেবে নিয়ে তা আতœসাৎ করেছে কাওসার মিয়া। এখন টাকা চাইলে তাকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়।
এ ব্যাপারে শিংটোলা পঞ্চায়েত কল্যাণ পরিষদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী সভাপতি, সাবেক সাংসদ সদস্য এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সাদত আলী শিকদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, পঞ্চায়েত কমিটির সেক্রেটারি এবং অর্থ সম্পাদকের অর্থ লুটপাটের বিষয়ে এলাকার মানুষের কাছে নানা রকম জবাব দিহিতা করতে হয়। সমিতির প্রায় ১৫ লাখ টাকার আয়-ব্যয়ের হিসাব নেই। তারা যেভাবে পারছে লুটেপুটে খাচ্ছে। মান-সম্মান টিকিয়ে রাখতেই সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে শিংটোলা পঞ্চায়েত কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাওসার মিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি ১২বছর ধরে একই পদে বহাল আছি। এলাকার মানুষ আমার সাথে আছে। একটি মহল আমার মান-সম্মান নষ্ট করতে এসব অভিযোগ করছে। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তাদেরকে আমার সামনে নিয়ে আসেন। আমি কারো নিকট থেকে জোর পূর্বক টাকা আদায় করিনি। সম্পাদনা: সৈয়দ নূর-ই-আলম