ইকোনমিস্টে ওবামার নিবন্ধ এগিয়ে যাওয়ার পথ
ডেস্ক রিপোর্ট : বিশ্লেষণধর্মী দীর্ঘ এক নিবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ও বিশ্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের রূপরেখা তুলে ধরেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ব্রিটেনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ইকোনমিস্টে ‘দ্য ওয়ে এহেড’ বা এগিয়ে যাওয়ার পথ শীর্ষক ওই নিবন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান নানা সমস্যা, চ্যালেঞ্জ এবং মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও অসন্তোষের কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন।
ওবামা লিখেছেন, বিশ্ব অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী। তারপরও আমাদের সমাজগুলো অনিশ্চয়তা আর অস্বস্তির আবর্তে ঘেরা। এ পরিস্থিতিতে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। হয় আমরা পুরনো, বাতিল অর্থনীতিতে ফিরে যাব অথবা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। বিশ্বায়নের সঙ্গে যে অসমতা আসতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট থেকে সবার জন্য কার্যকর শুধু শীর্ষস্থানীয়দের জন্য নয়, এমন একটি বৈশ্বিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে নিজেদের আত্মনিয়োগ করব।
ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আমরা যখন ব্যবধান কমাতে পারি এবং অগ্রগতি বৃহৎ পরিসরভিত্তিক থাকে তখন অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত বেশি সফল হয়। যে বিশ্বে মানবতার ১ শতাংশ বাকি ৯৯ শতাংশের সমপরিমাণ সম্পদের অধিকারী তা কখনই স্থিতিশীল হতে পারে না। ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধানের বিষয়টি নতুন নয়। তবে বস্তির একটা শিশু যেমন নিকটবর্তী সুউচ্চ ভবন দেখতে পারে তেমনি প্রযুুক্তির সুবাদে স্মার্টফোন হাতে যে কেউ দেখতে পারে সুবিধাপ্রাপ্তরা কীভাবে জীবনযাপন করে। মানুষের প্রত্যাশা বাড়তে থাকে দ্রুত। কিন্তু সরকারগুলো তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না।
পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখান থেকে কোন দিকে অগ্রসর হবেন সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ওবামা লিখেছেন, অর্থনীতিকে ঢালাওভাবে ঢেলে সাজানো এবং মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব এড়িয়ে নতুন করে একটি কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বরং কঠোর পরিশ্রমী মার্কিনিরা এগিয়ে যেতে পারেনÑ এমন একটি অর্থনীতিতে আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হবে। ১. উৎপাদনশীলতার বিকাশ বেগবান করা। ২. ক্রমবর্ধমান অসমতা বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা। ৩. চাকরিপ্রত্যাশী প্রত্যেকে চাকরি পাবেÑ তা নিশ্চিত করা। এবং ৪. ভবিষ্যৎ ক্রমবিকাশমুখী স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি গড়ে তোলা।
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে ওবামা লিখেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইন্টারনেট, মোবাইল ব্রডব্যান্ড, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়াল, জ্বালানি কার্যকারিতায় উন্নতি ও পার্সোনালাইজড মেডিসিনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রযুক্তিগত অসামান্য অগ্রগতি দেখেছি। তবে, এসব উদ্ভাবন মানুষের জীবন পাল্টে দিলেও, উল্লেখযোগ্যভাবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারেনি।
অসমতা বা বৈষম্য নিয়ে ওবামা বলেন, সব থেকে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে এটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, অর্থনীতি অনেক বেশি সফল হয় যখন আমরা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনি এবং অগ্রগতি হয় সর্বব্যাপী। এটা স্রেফ কোনো নীতিগত যুক্তি নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দেশে বৈষম্য বেশি সেসব দেশে প্রবৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত বেশি দুর্বল এবং অর্থনৈতিক মন্দাও নিয়মিত হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত, সফল একটি অর্থনীতি চাকরিপ্রত্যাশী প্রত্যেকের জন্য অর্থবহ সুযোগের উপরও নির্ভর করে। বাধ্য হয়ে বেকার বসে থাকার প্রভাব পড়ে আত্মবিশ্বাস, স্বাস্থ্য ও আয়ুর ওপর। জীবনের ওপর সন্তুষ্টি কমে যায়।
সবশেষে, অধিকতর স্থিতিস্থাপক অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করিয়ে দিয়ে গেছে অর্থনৈতিক সংকট। প্রয়োজন এমন একটা অর্থনীতি যা স্থিতিশীলভাবে ক্রমবিকাশমান। যেখানে বর্তমানের স্বার্থে ভবিষ্যৎকে বলি দেওয়া হয় না। ওয়াল স্ট্রিটে সংকট পরবর্তী সংস্কার হওয়ার পর আমাদের আর্থিক অবস্থা অনেক বেশি স্থিতিশীল। দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির জন্য অনুকূল। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য আমরাই প্রথম একটি ওয়াচডগ প্রতিষ্ঠান গঠন করেছি- দ্য কনজিউমার ফাইনান্সিয়াল প্রোটেকশন ব্যুরো।
নিবন্ধের শেষে ওবামা লিখেছেন, আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা মাঝে মাঝে হতাশাজনক মনে হতে পারে। বিশ্বাস করুন, আমি জানি। কিন্তু এটাই আবার দুই শতকেরও বেশি সময়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির উৎস। গত আট বছরের অগ্রগতি বিশ্বের জন্যও কিছুটা আশা হওয়া উচিত। সব ধরনের বিভক্তি, মতানৈক্য সত্ত্বেও ২য় আরেকটি গ্রেট ডিপ্রেশন প্রতিহত করা গেছে।
এর ফল স্পষ্টত আরও টেকসই ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি; ২০১০-এর শুরুর পর থেকে বেসরকারি খাতে দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থান; মজুরি বৃদ্ধি, দারিদ্র্য কমে আসা এবং বৈষম্য পাল্টে দেওয়ার সূচনা; হেলথ ইনস্যুরেন্সের আওতায় আরও ২ কোটি মার্কিনি যেখানে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় বৃদ্ধির হার ছিল ৫০ বছরের মধ্যে সব থেকে কম; বার্ষিক ঘাটতি প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কমিয়ে আনা এবং কার্বন নির্গমন কমে আসা।
এখনো যত কাজ বাকি রয়েছে তার জন্য নতুন একটি ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। এখন নতুন একটি ভবিষ্যৎ লিখতে হবে আমাদেরই। সেটা অবশ্যই অর্থনৈতিক অগ্রগতির এক ভবিষ্যৎ হতে হবে যা শুধু টেকসই হবে তা নয়; যেটা হবে সবার জন্য। এটা অর্জন করতে হলে, ভবিষ্যৎ বিশ্ব প্রজন্মের জন্য শক্তিশালী ও অধিক সমৃদ্ধশালী অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমেরিকাকে অবশ্যই সব রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে হবে। মানবজমিন