চীনের প্রেসিডেন্ট ১৪ অক্টোবর আসছেন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণচুক্তি হবে এই সফরে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : আগামী ১৪ অক্টোবর ঢাকা আসছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কূটনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক দুদিক থেকেই এ সফরকে ঐতিহাসিক বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ঋণ সহায়তার চুক্তি হতে পারে জিনপিংয়ের বৈঠকে।
এছাড়া চীন এর আগেই বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি গুয়ানজুর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের জন্য প্রাথমিকভাবে ২১টি প্রকল্প বাচাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম চীনের প্রেসিডেন্টের সফর সম্পর্কে বলেছেন, শি-এর সফরে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতা। চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এগিয়ে আসছে। তার এ সফরে অনেকগুলো বড় চুক্তি হতে পারে।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, শি জিনপিংয়ের সফরের সময় রেকর্ড পরিমাণ ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই চীনসহ সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়ন বিস্ময়। আর এ কারণেই চীন ঋণ দিতে আগ্রহী।
সূত্র জানায়, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশকে ৪ হাজার কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে চীন। গত ৪ অক্টোবর ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি গুয়ানজুর মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য প্রাথমিকভাবে ২১টি প্রকল্প বাছাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। বড় ধরনের কোনো নীতি পরিবর্তন না হলে এ তালিকাই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছে চীন।
প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যুতের চারটি, সড়ক পরিবহনের চারটি, রেল খাতের চারটি, জীবনমান উন্নয়নে পাঁচটি, জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি করে এবং শিল্প খাতের দুটি প্রকল্প রয়েছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে প্রকল্পে ১৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ডলার আসতে পারে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য ২৫৭ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল প্রকল্পে ৩০৩ কোটি ডলার, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনের (ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ) উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার, ‘সীতাকু–চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে ও কোস্টাল সুরক্ষা প্রকল্পে ২৮৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য ১৬০ কোটি ৩৩ লাখ, এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্পে ২০৩ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা রয়েছে।
সিস্টেম লস রিডাকশন বাই রিপ্লেসিং পঞ্চাশ লাখ ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল এনার্জি মিটার উইথ ইলেক্ট্রনিক এনার্জি মিটার প্রকল্পে ১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি’তে ১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলার, ‘গজারিয়ায় ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র’ দিতে পারে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার, ‘রাজশাহী সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার, বিটিভির পাঁচটি টিভি স্টেশন স্থাপন প্রকল্পে ১২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, বিজেএমসির আওতায় ‘সরকারি পাটকল আধুনিকায়ন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে’ ২৮ কোটি ডলার এবং ‘এস্টাব্লিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ প্রকল্পে ১০০ কোটি ডলার দিতে পারে চীন।
এছাড়া পাঁচ প্রকল্পে অর্থের অংক উল্লেখ করা হয়নি। সেগুলো হচ্ছেÑ চায়না অর্থনৈতিক ও শিল্প জোন চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রজেক্ট, ‘ড্রেনেজে অ্যান্ড সলিড ওয়াস্ট ম্যানেজমেন্ট ফর স্মল সাইজ পৌরসভা, রিপ্লেস অব ওভারলোডেড ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ফর প্রোভাইডিং রিলায়েবল ইলেক্ট্রিসিটি ইন আরই সিস্টেম। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম