আমার ভার্চ্যুয়াল ‘ছায়াসঙ্গী’র জন্য ভাবনা
কাকন রেজা
নাটকটি অন্তর্নিহিতসহ সার্বিক বিষয়াদি বোঝাতে হিন্দি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, টিভির সামনে বসাদের এমনতর ব্যাখ্যার আধা বুঝলাম, আধা বুঝলাম না। আমাদের দেশে কী নিজস্ব ভাষা বৈচিত্রের অভাব দেখা দিয়েছে, নাকি গল্পের আকাল পড়েছে?
এসব বিষয়ে সঙ্গত কারণেই হুমায়ূন আহমেদের অভাবটা আরও গভীরভাবে অনভূত হয়। হুমায়ূন আহমেদের প্রতিটি নাটকে মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ থাকত। মানুষকে টেনে সরিয়ে নেওয়া যেত না টিভিপর্দার সামনে থেকে। কোথায়, হুমায়ূনের তো এসব করতে হয়নি। তিনি অবলীলায় তার এবং আমার নিজ অঞ্চল ময়মনসিংহের ভাষাকে ব্যবহার করেছেন। কাহিনী তৈরিতে যদি ভাষা বৈচিত্রই লাগে তাহলে আমাদের সিলেট, চিটাগাং, নোয়াখালী, বরিশালের আঞ্চলিক ভাষার বৈচিত্রের সামনে অন্যকিছু লাগে কি?
আর এ কারণেই ঈদ, অবসরে কিংবা ছুটিছাটায় হুমায়ূন আহমেদবিহীন টিভি দেখা ক্রমেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
তৃতীয় ব্যাখ্যাটি একজন রিপোর্টারের সঙ্গে একজন মানুষের সম্পর্কের ব্যাপারটিকে ঘিরে। একজন রিপোর্টারের লেখার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে মানুষ। তথ্যের উৎস মানুষ। মানুষ ছাড়া পশুপাখি কিংবা জড় পদার্থ তথ্যের উৎস হতে পারে না। কিছু জানতে হলে মানুষের কাছ থেকেই জানতে হবে।
আর বিনোদন সাংবাদিকতা পুরোপুরি ব্যক্তিনির্ভর। সুতরাং এখানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠা একটি কঠিন ব্যাপার। কারণ শোবিজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের যেমন ক্যারিয়ারটাই মূল, ঠিক তেমনি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও। দুটি ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আসার জায়গা নেই, জায়গা ছেড়ে দেওয়ার উপায় নেই।
সুতরাং ক্যারিয়ার নিয়ে ‘ক্যারিকেচার’ থাকবেই। একটি খবরের জন্য যেমন সম্পর্ক তৈরি হয়, তেমনি ভাঙেও। সুতরাং এমন পরস্পরবিরোধী দুটি পেশার মধ্যে সম্পর্কটা ‘কচু পাতার পানি’ সঙ্গেই তুলনীয়।
চতুর্থ বিষয়টি ‘ছবি’ ঘটিত। অনুমতি না নিয়ে যদি ছবি প্রকাশিত হয়। যার ছবি তার যদি মনপুত না হয়। তাহলে? আর সব ছবিই কি অনুমতি নিয়ে তোলা সম্ভব, আর সব ছবিই কি সবার মনপুত হয়? কিন্তু অনুমতি ও মনপুতের এই ফেরে যদি পড়ে যান ছবি প্রকাশ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত আলোকচিত্রী, সংবাদদাতা এবং সম্পাদক, তাহলে?
সেলিব্রেটিদের ছবির ক্ষেত্রে কী হবে? ঐশ্বরিয়া, সানি লিওন, কারিনার প্রচুর ভক্ত বাংলাদেশে। এসব তারকার ছবি ছাপতে গেলে অনুমতি কীভাবে নেওয়া যাবে? আর ছাপা হলে কোনো ভক্ত যদি ছবিটি পছন্দ হয়নি বলে ‘মানসিক’ ক্ষতির প্রতিকার চান! তাহলে? আর দেশি সেলিব্রেটি ও তাদের ভক্তদের ক্ষেত্রে বিষয়টি তো আরও সহজ। ‘পাগল’ ভক্ত তো অনেক আছেন। তাদের যদি কেউ ‘নাও ডোবানো’র কথা মনে করিয়ে দেন তাহলে তো অবস্থা পুরাই লেজে গোবরে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ক্ষেত্রে কি হবে? কোনো একটি রাজনৈতিক সমাবেশের মঞ্চের ছবি ছাপা হলো। একজন বক্তৃতা করছেন, অন্যরা বসে আছেন মঞ্চে। এমন একটি ছবিতে কোণায় বসা একজন নেতার হাই তোলা অবস্থার একটি দৃশ্য ক্যামেরাবদ্ধ হলো এবং তা প্রকাশিত, প্রচারিত হলো।
এ অবস্থায় ওই নেতাজি যদি বলেন আমাকে অসম্মান করা হয়েছে কিংবা যদি তার কোনো ‘হার্ডকোর’ ভক্ত বলেন, ‘নেতাজির অপমান সইবে না ভক্তগণ’! তখন? এমনসব কঠিনতম ‘তখন’ বিষয়ক প্রশ্ন জড়িত রয়েছে এসবের পেছনে। আর এই ‘তখন’ কে ডিঙিয়ে ‘যখন তখন’ কোনোকিছু করা সত্যিই ‘চিন্তা এবং ভাবনা’র বিষয়।
আমার সেই রিপোর্টার ‘ছায়াসঙ্গী’কে নিয়ে তাই ভয় তো হতেই পারে। ভয় হতেই পারে এমন ‘ভয় তাড়িত’ পেশার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জন্যও।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান