১২ বছরে দেশে ৭২৪ জঙ্গি হামলা, প্রায় ৩ হাজার গ্রেফতার
আজাদ হোসেন সুমন: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলাসহ গত ১২ বছরে দেশে ৭২৪ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে পুলিশ ২ হাজার ৮৭৮ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বাধীন জেএমবি দেশে নাশকতামূলক তৎপরতা শুরু করে। তারা ২০০৩ ও ২০০৪ সালে দেশের বিভিন্নস্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটায়। তবে মূলত ২০০৫ সালে দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি ঘটে। এ বছর জঙ্গিরা সারাদেশে ২০৭ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটায়। ২০০৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭২৪ জঙ্গি হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭২৫টি। এসব মামলার মধ্যে ৬০৩টিতে পুলিশ ৩ হাজার ১৫৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে।
সূত্র জানায়, হিজবুত তাহরির, জেএমবি, আল-মারকাজুল ইসলাম, আনসারুল্লা বাংলাটিম, আনসার আল ইসলাম ও হরকাতুল জিহাদসহ বিভিন্ন নামে জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় তৎপর থাকলেও তাদের সবার উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। এরা নাশকতামূলক তৎপরতার মাধ্যমে দেশে ইসলামী হুকুমত কায়েমের নামে দেশে অরাজকতা সৃষ্টিই এদের মূল লক্ষ্য।
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আইজিপি একেএম শহীদুল হক গতকাল মুঠোফোনে বলেন, বিদেশ থেকে কোনো জঙ্গি এসে এদেশে হামলা করে না। জঙ্গিবাদে যারা জড়িয়েছে তারা এদেশেরই মানুষ। বিকৃত রুচি সম্পন্ন কতিপয় মাস্টারমাইন্ড দেশে এসব জঙ্গি তৎপরতা উস্কে দিয়েছে। তাদের অধিকাংশই ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে এবং পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, এসব জ্ঞানপাপী লোকগুলোর গবেষণা সেল আছে। তারা প্রথমে সমমনা উদীয়মান তরুণ-যুবকদের চিহ্নিত করে। তারপর তারা এদের বিভিন্ন সিডি বই এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গিবাদে সিদ্ধহস্ত করে। তারা মোটিভেশনের মাধ্যমে ব্রেনওয়াশ করে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, গত ১২ বছরে এরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ছাড়াও সিলেটে বোমাহামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহএএমএস কিবরিয়াকে হত্যা করে। ঝালকাঠিতে বিচারক জগন্নাথ পাড়ে হত্যাসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জঙ্গি হামলার শিকার হন। সবচেয়ে বেশি ‘টার্গেট কিলিং’ হয় ২০১৫ সালে। একে একে হামলার শিকার হয় চট্টগ্রামে নার্সিং প্রতিষ্ঠানের শিকিা অঞ্জনা দেবী, ‘মুক্তমনা’র প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাস, নীলয় নীল, শিক মানব চন্দ্র রায়, ইতালির নাগরিক তাবেলা, জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও, আধ্যাত্মিক নেতা খিজির খান, জাগৃতি প্রকাশক আরেফিন ফয়সাল দীপন, শুদ্ধস্বরের প্রকাশক টুটুল, বাহাই সেন্টার ডিরেক্টর রুহুল আমিন এবং ইসকনের প্রেসিডেন্ট বীরেন্দ্র নাথ।
২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে জঙ্গিরা একে একে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে হিন্দু পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ, ঝিনাইদহে শিয়া ধর্ম প্রচারক আব্দুল রাজ্জাক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী, ‘রূপবান’ পত্রিকার সম্পাদক জুলহাস মান্নান, নাট্য ও সমকামীদের অধিকার আন্দোলনের কর্মী মাহবুব তন্ময়, নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার, রাজশাহীর তানোর উপজেলার ‘পীর সাহেব’ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বান্দরবানের বাইশারী ইউনিয়নের চাক পাড়ার বৌদ্ধ ভিু মংশৈ উ চাক, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের জুতা ব্যবসায়ী দেবেশ চন্দ্র প্রামাণিক, নাটোরে খ্রিস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গমেজ, ঝিনাইদহে বৃদ্ধ পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলি, পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুরে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ সেবাশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডে, ঝিনাইদহে হিন্দু সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস ও বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মংশৈনু মারমা। এসব হত্যাকা-ের কয়েকটিতে আনসার-আল-ইসলাম নাম এলেও অধিকাংশ হত্যার জন্য আইএস ‘দায় স্বীকার’ করে।
পুলিশ সদর দফতরের এক প্রতিবেদনে টার্গেট কিলিং, ব্লগারদের উপর হামলা, মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক, ধর্মগুরু, বিদেশি নাগরিক হামলার প্রকৃতি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অস্ত্র হিসেবে জঙ্গিরা গত ১২ বছরে আগ্নেয়াস্ত্র, পেট্রলবোমা ও বোমা ব্যবহার করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম