শুল্ক গোয়েন্দার ইমেজ ধ্বংসে একজন নষ্ট এআরওই যথেষ্ট
এইচএম দেলোয়ার : বাংলাদেশ কাস্টমসের একটি আলাদা বিভাগ হচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা। একজন মহাপরিচালকের অধীনে এ বিভাগটি পরিচালিত হয়। বর্তমান মহাপরিচালক মইনুল খানের নেতৃত্বে শুল্ক গোয়েন্দা এরইমধ্যে চোরাচালানের মূল উৎপাটন প্রচেষ্টার জন্য সবার নজর কেড়েছেন। কিন্তু প্রত্যেক বিভাগেই ভালো-মন্দ কর্মকর্তা থাকেন। ভালোদের প্রশংসা সবার মুখে মুখে। আর খারাপদের ভূমিকাও বিতর্কিত হয়ে পড়ে। এমনই এক কর্মকর্তা শুল্ক গোয়েন্দার তিলে তিলে গড়ে উঠা ইমেজ নষ্ট করতে যথেষ্ট।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের এয়ারফ্রেইট আমদানি-রপ্তানিকেন্দ্রিক শত শত আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং সি অ্যান্ড এফ এজেন্টরা একজন শুল্ক গোয়েন্দার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার (এআরও) অত্যাচারে অতিষ্ঠ। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ওই এআরও একটি বিশেষ জেলার বাসিন্দা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে দাপট দেখিয়ে আমদানি করা পণ্যের শতভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সরকারি তফসিলি ব্যাংকে ট্যাক্সের টাকা জমা দেওয়ার পরও পণ্য খালাস করে গন্তব্যে নেওয়ার সময় পণ্য আটক করে হয়রানি করেন। অনেক সময় এয়ারফ্রেইটের ১নং, ২নং ও কুরিয়ার গেট দিয়ে পণ্য খালাসের সময় পণ্য চালান আটক করে ব্যবসায়ীদের চরম হয়রানি করে থাকেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগÑ শুল্ক গোয়েন্দার এআরও পণ্য চালান খালাসের সময় লাখ লাখ টাকার ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দিলে পণ্যের চালান আটকে দেন। এ কাজে তাকে ফ্রেইটে কর্মরত একজন রাজস্ব কর্মকর্তাও সহযোগিতা করেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
গত মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) শতভাগ আমদানি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঢাকা কাস্টমস হাউস একটি পণ্যের চালানের শুল্ক নির্ধারণ করে দেয়। সেই শুল্ক পরিশোধ করে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওই পণ্যের চালানটি এয়ারফ্রেইট ১নং ডেলিভারি গেট দিয়ে খালাস করে নিয়ে গাড়িতে উঠানোর সময় শুল্ক গোয়েন্দার সেই এআরও মোটা অংকের ঘুষ দাবি করেন। কিন্তু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট তার দাবিকৃত ঘুষ না দেওয়ায় পণ্যের চালানটি আটক করেন। পণ্যের চালানটি আটকের পর ঢাকা কাস্টমস হাউসের সরকারি গুদামে রাখেনি হাউস কর্তৃপক্ষ। পরে পণ্যের চালানটি তাদের অফিস কক্ষে রেখে দেয়।
ব্যবসায়ীদের আরও অভিযোগ, শুল্ক গোয়েন্দার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা প্রতিটি বাণিজ্যিক চালান কাস্টমস হাউস যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ট্যাক্স নির্ধারণ করার পরও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কাছে মোটা ঘুষ দাবি করে। তার দাবিকৃত ঘুষ না দিলে পণ্যের চালান আটক করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করেন। ব্যবসায়ীরা জানান, বিভিন্ন উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য আমদানিকৃত মেশিনারিজ পণ্য অত্যন্ত জরুরি হলেও সেই পণ্য শতভাগ ট্যাক্স দেওয়ার পরও খালাস নিতে না পেরে প্রতিষ্ঠান অনেক সময় উৎপাদন বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়ে। আর এতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভাটা পড়ে যায়। ওই ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে (এআরও) এয়ারফ্রেইট থেকে বদলির জন্য ব্যবসায়ীরা শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ট্যাক্স পরিশোধে পণ্য খালাস করে নেওয়ার সময় পণ্য আটক করার ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দার এআরও-এর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে এডি ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে এয়ারফ্রেইট কর্মরত সহকারী পরিচালক (এডি) ফেরদৌসি মাহবুব বলেন, পণ্যের চালানটি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে নেওয়ার সময় তা আটক করা হয়েছে। কাস্টমস হাউসের গুদামে জায়গা না থাকায় কিছু পণ্য আমাদের অফিস কক্ষে এবং কিছু পণ্য বিমানের স্ট্রং রুমে রাখা হয়েছে।
এদিকে শুল্ক গোয়েন্দার বিরুদ্ধে পণ্য কেড়ে নেওয়ারও অভিযোগ করেছেন ভারত ফেরত ৪০ জন যাত্রী। গত মঙ্গলবার মৈত্রী ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। ৪০ জন যাত্রী মৈত্রী ট্রেনে করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছার পর শুল্ক গোয়েন্দা টিম সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের ৭৭টি লাগেজ কেড়ে নিয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। অন্যদিকে শুল্ক গোয়েন্দা বলছে, ওই ৪০ জন যাত্রী শুল্ক ফাঁকি দিয়ে লাগেজগুলো নিয়ে যাচ্ছিল। যাত্রীরা বলেন, আমরা এসব পণ্য কিনে এনেছি এবং বাংলাদেশে প্রবেশের পর সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব পণ্যের ছাড়পত্রও দিয়েছেন। যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেনে যাত্রা করলেই তাদের এ হয়রানির শিকার হতে হয়।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের উপ-পরিচালক শরীফ আল হাসান বলেন, জব্দ করা পণ্যের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে লাগেজভর্তি পণ্যগুলো যাত্রীরা নিয়ে যাচ্ছিল। শুল্ক গোয়েন্দা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তা জব্দ করে। জব্দকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছেÑ ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি ও অন্যান্য পণ্য। জব্দকৃত পণ্যের মূল্য ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ফ্রেইেটে অভিযান চালিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা যে রোবটটি জব্দ করেছে তা-ও ভুয়া বলে দাবি করেছে ঢাকা কাস্টমস হাউজ। ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম-কমিশনার ড. তাজুল ইসলাম বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে যে রোবটটি জব্দ করেছে তা শতকরা ১ ভাগের জায়গায় ৬৫ ভাগ শুল্ক আদায় ও শতভাগ কায়িক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খালাস দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃক জব্দকৃত ১৫ কেজি ওজনের রোবটটি ধানম-ির ডা. ফারুক তার মায়ের হাঁপানির চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করেন।