
জন কেরির সঙ্গে খালেদার একান্ত বৈঠকের পর বিএনপি সহনশীল, ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সফরকালে একান্ত বৈঠক করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তাদের মধ্যে ১০ মিনিট একান্ত বৈঠক হয়। সেখানে খালেদা জিয়া আর জন কেরি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। এসময় দুজনে কথা বলেছেন আগামী দিনের পারস্পরিক সহযোগিতা ও দুই পক্ষের কৌশল নিয়ে। বৈঠকের পর এই বিষয়ে খালেদা জিয়া নেতাদেরকে বিশেষ কিছুই বলেননি। তবে কাছের কয়েকজন বিষয়টি জানেন।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন ও সেই দিকে সরকারকে নিয়ে যাওয়ার জন্য করণীয় সম্পর্কে খালেদা জিয়া কয়েকজন নেতাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এরমধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রয়েছেন। খালেদা জিয়া তারেক রহমানকে বৈঠকের বিষয়টি জানিয়েছেন। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আন্তর্জাতিক মহলের পুরোপুরি সমর্থন পেতে হলে ও সহযোগিতা পেতে হলে জনগণকে পাশে রাখতে হবে। জনগণকে পাশে রাখার জন্য জনগণসম্পৃক্ত কর্মসূচি বাড়াতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ সূত্র ও বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, গত ২৯ আগস্ট বিকালে ম্যাডামের সঙ্গে জন কেরির একান্ত বৈঠকে দুই পক্ষে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতাসীন হলে যুক্তরাষ্ট্রকে কী কী সুবিধা দেওয়া হবে তা জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কী চায় তা-ও জানিয়েছে। বিনিময়ে তারা যে সহযোগিতা করবে সেই আশ্বাসও দিয়েছে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা বঙ্গোপসাগরে তাদের একটি অবস্থান তৈরি করা। এটা তারা করতে চায় চীন, পাকিস্তানের জন্য। চীন ও পাকিস্তানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে সিদ্ধান্ত তা কার্যকর করতে হলে ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। সেই সহযোগিতা বাংলাদেশ আগামী দিনে কীভাবে করবে সেই ব্যাপারে আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে সহযোগিতা কেমন করে দেওয়া হবে সেই আশ্বাস দেওয়া হয়। কেরির সঙ্গে বৈঠকের পর খালেদা জিয়া এটা বুঝতে পেরেছেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ তৈরি করবে। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অন্যান্য মহলও যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকবে। বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচন করানোর জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহল আবারও চাপ তৈরি করবে। সরকার এই ব্যাপারে অনমনীয় ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে রাজি না হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহল আরও সময় নিতে চাইছে। তাদের সময় নেওয়ার জন্য এখনই বিএনপি বিশেষ সহযোগিতা পাচ্ছে না। তবে আগামী নির্বাচনের জন্য আশ্বাস পেয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান অনেকটাই সহনশীল ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করছেন।
নেতাকর্মীদেরও আপাতত আগ্রাসী হওয়া ও মাঠে নামার ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। দলকে সুসংগঠিত করেই তারা এগিয়ে যেতে চাইছে।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে জন কেরির ওইদিন ৪৫ মিনিট বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে দশ মিনিট ছিল একান্ত বৈঠক। কিন্তু এই একান্ত বৈঠকের বিষয়টি বিএনপির তরফ থেকে অনেকটা গোপন রাখা হয়।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে খালেদা জিয়া সার্বিক বিষয় তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের মানুষের ও বিএনপির জন্য বিশেষ করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য যা যা উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন সেই সম্পর্কে আলোচনা করেছেন ও আশ্বাস পেয়েছেন। এই কারণে বিএনপি এখনও পর্যন্ত কোনো ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এমনকি এই বছরের মধ্যে আন্দোলন করবে এমন কোনো প্রস্তুতিও তাদের নেই। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এরপর তারা পরবর্তী কর্মসূচি দেবে, তবে এই বছরের মধ্যে বিএনপি সকল জেলার কমিটি গঠনের কাজ শেষ করবে। কমিটি গঠন করার পর খালেদা জিয়া বিভিন্ন জেলা সফর করবেন এবং সমাবেশ করবেন। জনমত গঠন করার জন্য বিভিন্ন সমাবেশেও বক্তৃতা করবেন। এরপর পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবেন। এখন জনমত তৈরি করাই প্রধান কাজ।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আন্দোলনে নামার জন্য এখনও আমরা কোনো দিনক্ষণ ঠিক করিনি। তবে সরকার যে আগামীতে আরও একটি পাতানো ও পরিকল্পিত নির্বাচন করতে চাইছে এই ব্যাপারে আমরা জনগণকে পাশে নিয়ে প্রতিবাদ গড়ে তুলব। তিনি বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন জেলা কমিটি গঠনের পর বিভিন্ন জেলায় গণসংযোগ করবেন। সমাবেশ করবেন। ধীরে ধীরে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করবো। আমরা এখন তাড়াহুড়া করছি না।
