মাহমুদুল আলম: জঙ্গি দমনে প্রায় প্রতিনিয়তই অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসবের কোনো কোনো খবর গণমাধ্যমে আসে। আবার কোনোটা আসে না। বিশেষ করে আলোড়িত কোনো ঘটনা ঘটলে সে খবর গণমাধ্যমে এলেও তুলনামূলক ছোট-খাট খবর আসে না বললেই চলে। কোনো কোনো খবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই গণমাধ্যমকে জানায়। আবার কোনোটি পরবর্তী অভিযানের স্বার্থে গোপন রাখে। কথাগুলো বলছিলেন সাংবাদিক এবং জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষক জায়েদুল আহসান।
গাজীপুরে গত শনিবারের অভিযানের আগে জঙ্গি আস্তানার খবর পুলিশ কীভাবে জেনেছে, জানতে চাইলে তা তিনি নিজের পর্যবেক্ষণ থেকে তুলে ধরেন এই প্রতিবেদকের কাছে। বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের সম্পাদক জায়েদুল আহসান জানান, পুলিশের কাছে আগেই তথ্য ছিল গাজীপুর থেকে এক জঙ্গি নাটোর যাবে। এর প্রেক্ষিতে তারা বগুড়ায় ওঁত পেতে ছিল।
বগুড়া থেকেই পুলিশ জানতে পারেন, গাজীপুরে পাশাপাশি দুটি বাড়ি বা ঘর আছে। যার প্রতিটিতেই ২-৩ জন করে লোক থাকে। তবে তারা বের হন না। দুই ঘরের লোকই জানে পাশের ঘরে লোক আছে। তবুও এক ঘরের লোক আরেক ঘরের লোকের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করেন না বা হয় না। আর দুটি ঘরের কোনো একটি জঙ্গিদের আস্তানা।
বগুড়া থেকে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুক্রবার রাত তিনটার দিকে সেখান থেকে পুলিশ গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং পাঁচটার দিকে ওই বাড়িটি খুঁজে পায়। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা সেখানে অভিযানের জন্য প্রস্তুত হয়। তখন ওই দুটি ঘরের একটি থেকে লোক বের হয়ে দাবি করেন, তারা র্যাব সদস্য।
তারপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুলিশ কথা বলে নিশ্চিত হয় যে, সত্যি তারা র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য এবং তারা জঙ্গি আস্তানার পাশের ঘর ভাড়া করে সেখানে থেকেই বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গিদের বিষয়ে বিস্তারিত জানছিল। পরে র্যাব সদস্যরাই ওই বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে এরই মধ্যে পুলিশের অভিযান আয়োজনের অংশ হিসেবে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ বিশেষজ্ঞ, অগ্নি-নির্বাপণ দল ও সোয়াত সদস্যরা প্রস্তুত থাকলেও পুলিশ ফিরে আসে।
বগুড়া থেকে যিনি এই তথ্য দিয়েছিলেন, তখন তার কাছ থেকেই কাছাকাছি আরেকটি জঙ্গি আস্তানার খবর পায় পুলিশ এবং সেখানে অভিযান চালায় তারা। ওই অভিযান চালাতে গিয়ে প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না তাদের। কারণ চারদিকে খোলা মাঠ, মাঝখানে একটি দোতলা বাড়ি। এমন একটা বাড়ি জঙ্গি আস্তানা হওয়ার কথা নয়। তারপর নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালায় পুলিশ সদস্যরা।
গত শনিবার সকাল আটটায় প্রথম অভিযান শুরু করে র্যাব। গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার হাঁড়িনালে ওই বাড়িতে এই অভিযানে নিহত হন দুজন। দুপুর ১২টার দিকে দেড় কিলোমিটার দূরে নোয়াগাঁওয়ের পাতারটেক এলাকার ওই দোতলা বাড়িতে অভিযান শুরু করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও সোয়াত। সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি