জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের সাফল্য
মিল্টন বিশ্বাস
বিশ্বব্যাপী সকলের কাছে একথা পরিষ্কার যে, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে জামায়াত-শিবির দেশের মধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত রয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ঘাপটি মেরে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই জামায়াত-শিবির সক্রিয় হয় দেশ-বিদেশে। ২০১২ সালে বিচারের রায় দেওয়া আরম্ভ হলে তারা আরও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। তখন ৫ নভেম্বর থেকে টানা ৯ দিন নাশকতায় লিপ্ত হয় তারা। অপরাধীদের মুক্তি দাবি করে উগ্রবাদিরা বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
এ পরিস্থিতিতে ১৪ নভেম্বর ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন যে, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করা হবে। যত বাধা ও হামলা আসবে তত দ্রুত নিষ্পন্ন হতে থাকবে মামলা এবং একে একে রায় ঘোষিত হবে। সে বছরই ২৫ নভেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হলে এসব অপরাধীদের যে মুক্তি দেওয়া হতে পারে সে সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়। কারণ অপরাধীদের ফাঁসির রায় ঘোষিত হলেও তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি। উল্লেখ্য, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুকেন্দ্রিক আন্দোলনের সুযোগে জঙ্গিদের তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হলে বিএনপি দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধের ডাক দেয়। ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধিদলের আন্দোলনের নামে সহিংসতায় মারা যায় ২০ জন, ৪০ জন পুলিশসহ আহত হয় ২৯০ জন। ৭০টির মতো বোমা হামলা চালায় বিরোধী সমর্থকরা। পুলিশের ৫টিসহ গাড়ি পোড়ানো হয় ৫০টি। ভাঙচুর করা হয় আরও ১৫০টি।
সরকার বিএনপির দাবিকে অযৌক্তিক হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বারবারই বলে আসছিল। কারণ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ ৬ হাজার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় নির্বাচন কমিশন ৫ জানুয়ারি (২০১৪) জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে সক্ষম বলে তারা মনে করতেন। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে জঙ্গি দমনের বিষয়ে অভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সন্ত্রাস নির্মূলে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ‘বন্দি-বিনিময় চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। উপরন্তু সীমান্তে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী ব্যতীত কাউকে গুলি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ও উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ঢাকা থেকে ভারতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে মার্কিন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের প্রশংসা করা হয়েছে।
‘এ দেশের মাটিতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানো কঠিন’- এ শিরোনামে সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের মাটিতে কাজ চালানো সন্ত্রাসীদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাস নিয়ে ২০১৩ সালের ৩০ মে ওয়াশিংটনে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান