আসছে স্বাস্থ্যসেবা আইন এমবিবিএস পাশ করলেই ডাক্তার নয় ইন্টার্নশিপ হবে ২ বছর
এস এম নূর মোহাম্মদ : নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ‘স্বাস্থ্যসেবা আইন’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে কাজ করছে আইন কমিশন। এরইমধ্যে দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটির খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। যা আইন কমিশনের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে মতামত দেওয়ার সুযোগ রয়েছে প্রত্যেকের।
সব কিছু ঠিক থাকলে এ বছরের শেষ দিকেই তা চূড়ান্ত করে পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে। এরপর মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে তা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবে। রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা,
(প্রথম পৃষ্ঠার পর) ডাক্তারদের অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসা বা অবহেলাজনিত অপরাধের জন্য জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা, মানসম্মত ওষুধ না হলে বা অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করলে কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তি এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সুযোগ-সুবিধা না থাকলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা থাকছে এ আইনে।
নতুন আইনে ইন্টার্নশিপ এক বছরের পরিবর্তে দুবছরের চিন্তা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এমবিবিএস পাস করার পর বিএমডিসির মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে সনদ নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। যা উন্নত দেশগুলোতে চালু রয়েছে। এটি অনেকটা আইন পেশার আদলে। বার কাউন্সিল থেকে সনদ গ্রহণ ছাড়া কেবল এলএলবি বা বারএট ল পাস করলেই যেমন যে কেউ আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে পারে না ও নিজেকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিতে পারে না, ঠিক তেমনটি চিন্তা করা হচ্ছে চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও। আর এ বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসকদের মধ্য থেকেই। কেননা কোনো কোনো বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে অনেকের মধ্যেই অসন্তোষ কাজ করছে। এছাড়াও চিকিৎসকদের বিমা বাধ্যতামূলক করার কথা চিন্তা করছে সংশ্লিষ্টরা। যাতে কোনো রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ডাক্তার তার বিমা থেকে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে পারে। অনেক দেশেই এ ধরনের বিমার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিশন করার প্রস্তাবও করা হয়েছে। তবে আইন কমিশনের ওয়েব সাইটে দেওয়া খসড়ায় পরীক্ষা, ইন্টার্নশিপ এবং বিমার বিষয়ে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই।
আর আইন বাস্তবায়নে একটি ‘জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে সুপারিশ করা হয়েছে কর্মচারীদের কোনো সংগঠন না রাখার ব্যাপারেও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা ফউজুল আজিম বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করেছি। ডাক্তার ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছি। বৈঠক করেছি দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসকদের সঙ্গেও। এদের মধ্যে ছিলেন বিএমএর মহাসচিব ইকবাল আর্সনাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রাণ গোপাল দত্ত, জাতীয় অধ্যাপক এমআর খান, বারডেম হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরূপ রতন চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন। এমবিবিএসের পর পরীক্ষার প্রস্তাব এসেছে খ্যাতিমান চিকিৎসকদের পক্ষ থেকেই। তবে আমরা এখনো কোনো বিষয় চূড়ান্ত করিনি। এটি নিয়ে আরও আলোচনা হবে। আমরা আরও কয়েকটি মেডিকেলে যাব। সবার সঙ্গে কথা বলব। সব কিছু ঠিক থাকলে এ বছরের শেষ দিকে আশাকরি আইনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারব। এরপর বাকিটা মন্ত্রণালয় চিন্তা করবে।
এদিকে আইন কমিশনের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা স্বাস্থ্য আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘পেশাগত অবহেলা’ অর্থ চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত যেকোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কর্তৃক পেশাগত বা প্রাতিষ্ঠানিক অযতœ, অসচেতনতা, পেশাগত মানদ- বা মূল্যবোধ বহির্ভূত চিকিৎসাসংক্রান্ত কোনো কাজ করা বা আইন দ্বারা আরোপিত কোনো দায়িত্ব পালন না করা, চিকিৎসাসেবা প্রদান না করা বা বিলম্বিত করা বা ভুল চিকিৎসা করা।
যার দ্বারা রোগীর রোগমুক্তি ঘটে না বা বিলম্ব ঘটে বা অঙ্গহানিসহ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মৃত্যু ঘটে। এছাড়া সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তিকৃত বা বহির্বিভাগীয় রোগীকে সময়মত পরীক্ষা না করা, গুরুতর বা মুমূর্ষু রোগীকে আবশ্যকীয় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান না করা, ভুল ব্যবস্থাপত্র প্রদান, ভুল বা নিম্নমানের অষুধ প্রয়োগ বা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান ও মাত্রাতিরিক্ত অষুধ ব্যবহারের ব্যবস্থাপত্র প্রদানকে বুঝাবে।
প্রকাশিত খসড়ায় আরও বলা হয়েছেÑ এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এবং এর বিধান অনুসারে সরকার ‘জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন’ নামে একটি কমিশন প্রতিষ্ঠা করবে। কমিশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় হবে এবং কমিশন প্রয়োজনে জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে স্থানীয় কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে। কমিশনের ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেকোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ওষুধ কারখানা পরিদর্শন ও মান-উন্নয়নের নির্দেশ প্রদান এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করণ, লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিলকরণ, জরিমানা করতে পারবেন। কোনো অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণের জন্য জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর প্রেরণের ক্ষমতাও থাকবে কমিশনের।
চিকিৎসকদের ফি সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, সরকার চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্রাকটিসের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুসারে রোগীপ্রতি ফি নির্ধারণ করবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার মূল্যও সরকার নির্ধারণ করবে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি