ময়নাতদন্তেই আটকা রাবি শিক্ষক জলির ‘আত্মহত্যা’
মহিব্বুল আরেফিন, রাজশাহী: পুলিশের ময়নাতদন্তেই আটকে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির আত্মহত্যার রহস্য। এক মাস পার হলেও পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। রাবি কর্তৃপক্ষ জানায়, তারাই জলির মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করবে। গত শনিবার (০৮ অক্টোবর) রাতে রাবির সিন্ডিকেট সভায় ‘যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ অভিযোগ কমিটি’ পুনর্গঠন শেষে কমিটিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে নিজ কক্ষ থেকে জলিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন শিক্ষক জলির কক্ষ থেকে দুই টুকরো কাগজে ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ জলির কক্ষ থেকে দুটি ল্যাপটপ, চারটি পেন ড্রাইভ, তিনটি মুঠোফোন, ঘুমের ট্যাবলেট (ইজিএম), তরল পদার্থ, দুটি বালিশের কাভার, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও শেষ সময়ে তার পরিহিত কাপড়ের কাটা অংশ জব্দ করে। এসময় সুইসাইড নোটে’র হাতের লেখা শিক্ষক জলিরই সেটা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেন সহকর্মীরা। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১০ সেপ্টেম্বর মতিহার থানায় ‘আত্মহত্যায়’ প্ররোচণার মামলা করে জলির ছোটভাই কামরুল হাসান। তবে মামলায় কারো নাম উল্লেখ না থাকলেও অভিযোগ উঠে জলির সাবেক স্বামী একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদের দিকে। একপর্যায়ে তার সাবেক বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে নেয় রাবি কর্তৃপক্ষ। জলির আত্মহত্যার ঘটনা ও তার ‘সুইসাইড নোটের’ বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসলে একপর্যায়ে মুখ খুলে পুত্র আয়মান সোয়াদ আহমেদ। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, বাবা তানভীর তার গলায় ছুরি ধরেছিলেন। আর এটি শুধু মায়ের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে। ‘অনেকদিন ধরেই আমার কাছে ‘গলায় ছুরি’ ধরার ঘটনাটা জানতে চাওয়া হচ্ছে। আজকেই বলে দেই, কী ঘটেছিল ওইদিন’। ‘আম্মা আর আমি বাইরে যেতে চাইছিলাম আমার এক বান্ধবীর বাসায়। সারাদিন প্ল্যানিং করার পর আমি আব্বার কাছে অনুমতি চাইতে গেছিলাম। অনুমতি চাওয়ার সময় আব্বা বলে ‘তোমার আম্মাকে বলো ওর মত চলে যেতে। আমি তোমাকে দিয়ে আসবো।’ আমি বললাম, ‘আজব তো। আমি আর মা এই জিনিস প্ল্যান করসি। তুমি কেন ইন্টারফেয়ার করতেসো?’ আব্বা বলল, ‘বাপ হিসেবে আমার এই অধিকার আছে’। আমি বললাম, ‘কিন্তু আম্মার সাথে প্ল্যান নষ্ট করার অধিকার তোমার নাই’। আব্বা বলে ‘মেইন থিং ইজ তোমাকে ওই মহিলার সাথে যেতে দিব না। গেলে আমার সাথে যাবা, না হলে নাই।’‘আমি বলি ‘কি এমন করছে যে এত ক্ষতিকর মনে করো আম্মাকে? হ্যাঁ?’ আব্বা কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে যায়। পরে বাধ্য হয়ে আম্মাকে ফোন দিয়ে বলি যে আমি যেতে পারব না আজকে। মা বলে ‘আমি বুঝছি কি হয়েছে। চিন্তা করিস না বাবা। আর কয়েকটা দিন।’ ‘পরে সন্ধ্যা বেলায় আব্বাকে বলি ‘প্ল্যানটা নষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ’। তখনি আব্বা বলে উঠে ‘তুই কি ঝগড়া লাগাইতে চাস? তোর আম্মার মত হয়েছিস’। আমি বলি, ‘আমার আম্মার নামে এইসব কথা বলবা না। খবরদার!’ আব্বা বলে ‘তোর মায়ের সাথে কথা বন্ধ কর, এই কথাগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।’ আমি বলি ‘বন্ধ করবো না’ “আব্বা তখনি রান্নাঘরে গিয়ে একটা বড় চাকু নিয়ে এসে আমার গলায় ধরে বলে ‘কি বললি? শুনতে পাইনি’। বললাম অল্প সুরে ‘বন্ধ করবো না। মেরে ফেলতে চাইলে মারো। আম্মাকে তো আমার সামনে মারার চেষ্টা করেছো। সিউরলি এটাও পারবে।’ আব্বা চাকুটা ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দিলো। কিছু না বলে চলে যায় ঘরে।’
মতিহার জোনের সহকারী কমিশনার একরামুল হক জানান, ‘ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট এখনও আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। রিপোর্টগুলো আনার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এছাড়াও এই মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। রিপোর্ট হাতে পেলে তদন্তের কাজ আরও এগিয়ে নেয়া হবে’। সম্পাদনা : রিকু আমির