‘দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দুর্গা প্রতিমা নোয়াখালীর চৌমুহনীতে’
মাছুম বিল্লাহ ও আল-আমিন আনাম, চৌমুহনী থেকে ফিরে: এবারের শারদীয় উৎসবে দেশের সর্ববৃহৎ ও ব্যয়বহুল পূজার আয়োজন করা হয়েছে নোয়াখালীর বাণিজ্যক শহর চৌমুহনীতে। দুর্গা প্রতিমাটির উচ্চতা ৭১ ফুট দীর্ঘ। চৌমুহনীর কলেজ রোডে রামেন্দ্র সাহার বাড়ির প্রাঙ্গণে বিজয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে এ পূজা চলছে।
আয়োজকদের দাবি, এ দুর্গা প্রতিমা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেরা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই দুর্গা প্রতিমা দেখতে ভিড় করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। প্রতিবেশী ভারত থেকেও এ দুর্গা প্রতিমা দেখতে আসছেন। ৭১ ফুট উঁচু প্রতিমা তৈরি করছেন শরীয়তপুর থেকে আসা শিল্পী অমল কৃষ্ণ পাল। তার দাবি, ‘এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই দুর্গা প্রতিমাই সেরা।’
তিনি জানান, ‘ছাত্রজীবন থেকেই প্রতিমা বানাই। ১৯৭৪ সাল থেকে আজও এই নোয়াখালীতেই প্রতিমা বানাচ্ছি। এর আগে এত বড় প্রতিমা বানাইনি। এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রতিমা।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এর আগে বাংলাদেশের কোথাও এত বড় দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয়নি। ১২ জন সহযোগী ও কারিগর নিয়ে গত ৩ মাস ধরে এ কাজ করছি।’
বিজয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ রনি সাহার সঙ্গে কথা হয় এ আয়োজন নিয়ে। তিনি জানান, এক একটি ম-প তৈরিতে বিগত সময়ে বাজেট ছিল ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। এবার তার চেয়ে বেশি বাজেট করা হয়েছে। দেবী দুর্গার ৭১ ফুট দীর্ঘ প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বাজেট দেওয়া হয়েছে। এ বাজেট ধরা হয়েছে ৩২ লাখ টাকা।
বিজয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয় ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রতি বছরই চৌমুহনীতে বিভিন্ন আদলে দেশি ও আন্তর্জাতিক পুরাকীর্তির অনুকরণে ম-প তৈরি করা হয়। তবে এ বছর এটি সবার চেয়ে আলাদা। ৭১ ফুট উঁচু দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরি করে বিজয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছে।’
বিজয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সিনিয়র সহ-সভাপতি শ্রী শান্তনু সাহা জানান, ভারতের দেশপ্রিয় পার্কে গত বছর ৮৭ ফুট দীর্ঘ প্রতিমা তৈরি করা হলেও বাংলাদেশে এই প্রথম ৭১ ফুট দেবী মায়ের প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতি বছর বিজয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের পক্ষ থেকে তারা আলাদা কিছু করার চেষ্টা করেন। সেই আলোকে এবার তাদের এ ভিন্নতা।
গাজীপুর থেকে আসা হরিপদ সাহা আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, পূজা শুরুর আগেই খবর পেয়েছি চৌমুহনীতে সবচেয়ে বড় দুর্গা প্রতিমা নির্মিত হচ্ছে। তখন থেকেই এখানে আসার পরিকল্পনা ছিল। অনেক কষ্টের পর আজ এলাম। প্রতিমা দেখে ভালো লাগছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা দর্শনার্থী পূর্ণিমা রানী জানান, আশা ছিল প্রতিমাটি দেখব। অবশেষে দেখলাম। ভালো লাগছে।
ভারত থেকে আশা জোগেন্দার পাল বলেন, খবরের কাগজে পড়েছিলাম এখানে বড় দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে। এরপর চলে এলাম।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুব্রত কুমার দে বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা কর্মীদের ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফ জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাতে নির্বিঘেœ পূজা উৎযাপন করতে পারে সেজন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক পূজাম-পে পর্যাপ্ত পুলিশ, আনসার ও পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করছে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম