জাদুকরি দেশ একটাই, সেটার নাম বাংলাদেশ
আশীফ এন্তাজ রবি
শাড়ির মতো রহস্যময় পোশাক পৃথিবীতে আর একটিও নেই। একখ- সাদাসিধে কাপড় মাত্র। কোনো সেলাইয়ের বালাই নেই। তবে এই পোশাকটির মধ্যে একটা ভয়াবহ রহস্য আছে। এই পোশাকটি যার শরীরে চড়িয়ে দেওয়া যায়, মুহূর্তের মধ্যেই পোশাকটি তাকে আপন করে নেয়। মনে হয়, কেবলই তার জন্যই এই কাপড়টি বোনা হয়েছে।
বলা হয়, ফ্যাশনের জন্য পৃথিবীতে ৪টি রাজধানী আছে। নিউ ইয়র্ক, মিলান, প্যারিস এবং লন্ডন। দুদিন পরপর এখানে নিত্যনতুন ফ্যাশনের পোশাক আসে। লন্ডন ছাড়া অন্য তিনটি শহরে আমি একাধিকবার গেছি। এদের শপিংমল ঘুরে দেখার মতো একটা জায়গা। ঘুরে দেখেছিও। তারপর বলেছি, দেখ হে ভায়া, তোমাদের পোশাকে অনেক কেরদানি আছে বটে, কিন্তু বাংলাদেশের মতো না। আমাদের অতি রহস্যময় একটা পোশাক আছে। সাইজের কোনো বালাই নেই। ঠিকমতো শরীরে জড়িয়ে নিতে জানলে আর কিচ্ছু লাগে না। একদম মানিয়ে যায়। কারও জিন্স মানায় না, কাউকে স্কার্ট পড়লে বেখাপ্পা লাগে, শাড়ি এমনই এক মহাকাব্িযক পোশাক, সবাইকে মানায়। সুচিত্রা সেন থেকে ঐশ্বরিয়া। জননী থেকে জায়া। শাড়ি একটা জাদুকরি পোশাক।
এজন্য আমি আমার অসংখ্য বিদেশি বন্ধুকে শাড়ি উপহার দিয়েছি। আর ছেলেদের দিয়েছি লুঙ্গি। আমার কোনো কোনো বিদেশি ছেলে বন্ধু লুঙ্গি পছন্দ করেনি, কিন্তু এমন কোনো ভিনদেশি নারী আমি পাইনি, যে শাড়িকে অবহেলা করতে পেরেছে। একবার যে শাড়ি চড়িয়েছি, সে বারবার শাড়িরই জয়গান গেয়েছে।
ক্রিস্টি এবং ক্যারল আমার দুই বন্ধু। একজন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দুঁদে সাংবাদিক, আরেকজন লস এনজেলস টাইমসের। একজন হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্স এসোসিয়েশনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট, আরেকজন সাবেক। অসাধারণ সাংবাদিক, অসাধারণ মানুষ এবং অসাধারণ বন্ধু।
রোববারে সন্ধ্যায় এই দুই বিদুষী নারী আমার বাসায় এসেছিলেন। ভরপুর আড্ডা চলছে। এক ফাঁকে তারা দুজন মিতুর সঙ্গে শলা করে উপরের ঘরে চলে গেল। মিতুকে ফিসফিসিয়ে বলল, একদা রবি আমাদের শাড়ি উপহার দিয়েছিল। বলেছিল, এটা নাকি খুবই স্পেশাল একটা ড্রেস। আমরা সেই শাড়ি দুটো নিয়ে এসেছি। তুমি কি একটু পরিয়ে দেবে? আমরা পারি না। ওকে সারপ্রাইজ দেব।
নিচের বৈঠক খানায় আমাদের আড্ডা চলছে। আচমকা দুই ভিনদেশি নারী শাড়ি পড়ে নেমে এলেন। পুরো আড্ডা আচমকা স্তব্ধ হয়ে গেল। সবাই মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। আমি অবশ্য অতটা চমকাইনি। শাড়ির ক্ষমতা সম্পর্কে আমার ধারণা আছে।
ক্রিস্টি আমাকে খুবই সিরিয়াসলি বলল, আগামী বছরের হোয়াইটস হাউস পার্টিতে সে শাড়ি পরবে। জানি না পড়বে কিনা। হে ফেসবুকবাসীরা, আগামীতে মার্কিন মুল্লুকের হোয়াইট হাউসের পার্টিতে কোনো দুঁদে সাংবাদিককে যদি শাড়ি পড়তে দেখ, তাহলে জেনে রেখ সেই গল্পের পেছনে আমার ছোট্ট একটা হাত আছে।
আমি যতদিন বাঁচি, যেভাবে বাঁচি, বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করব। পৃথিবীতে উন্নত দেশ আছে, স্বল্পোন্নত দেশও আছে। কিন্তু জাদুকরি দেশ একটাই। সেটার নাম বাংলাদেশ। আমি বাংলাদেশের লোক।
লেখক: সাংবাদিক ও সঞ্চালক