শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফর : কার কি লাভ?
পূর্ব-পশ্চিম
সৈয়দ রশিদ আলম
বিক্রমপুরের কৃতি সন্তান শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর, বৌদ্ব ধর্মের সংস্কারের জন্য পায়ে হেটে আটশ বছর আগে এই বাংলা থেকে চীনের তিব্বতে গিয়ে বৌদ্ধ ধর্মকে নবজীবন দান করেছিলেন। চীনারা বিশেষ করে তিব্বতের বাসিন্দাদের কাছে তিনি দেবতা হিসেবে পূজিত হন। তার নামের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নামও শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। ভূপর্যটক ইবনে বতুতা এই বাংলাদেশ হয়ে সুদূর চীনে গিয়েছিলেন, সেখানে গিয়ে তিনি এই বাংলার গৌরব গাঁথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শিচিনপিং, চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ইতোপূর্বে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সব দেশেই চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশের স্বপ্নের পদ্মাসেতুসহ একাধিক সেতু নির্মাণে চীনের সহায়তা রয়েছে। আগামীতে চীনের সহায়তা আরও বাড়বে। বাংলাদেশের তিন বাহিনীর সমরাস্ত্রের বড় বিক্রেতা হচ্ছে চীন। আমাদের নৌবাহিনীতে, বিমানবাহিনীতে ও সেনাবাহিনীতে চীনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির, জঙ্গিবিমান, ট্যাংক, সাজোয়াযান, ফ্রিগেট, করভেট, সর্বাধুনিক মিসাইল রয়েছে। চলতি বছর চীনের তৈরি দুটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযোজিত হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হবে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূর্ণতা পাবে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রভাব আরও বাড়ছে। ভারতের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকে পড়ার পর একাধিক দেশ চীনকে মিত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। সংকটময় মুহূর্তে চীন কখনই বন্ধু দেশকে পরিত্যাগ করে না। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দেশকে সমরাস্ত্র দিচ্ছে, চীনকে কাবু করার জন্য। বাংলাদেশে যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের আগ্রহ ছিল। কিন্তু ভারতের কারণে এই পরিকল্পনা বন্ধ হওয়ার পথে। ভারত মনে করছে চীনের সহায়তায় যদি বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হয় তাহলে চীনের নৌবাহিনী উপস্থিতি বেড়ে যাবে। তাছাড়া চীনের ডুবো জাহাজগুলো ভারতীয় রাডারের চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম। চীন ও বাংলাদেশের মৈত্রিক বন্ধন আরও মজবুত হবে, দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে, সামরিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। এটাই কূটনৈতিকদের বিশ্বাস।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান