ফেসবুকে বাংলাদেশ…
শেখ হাসিনাই প্রমাণ করলেন বঙ্গবন্ধুর বিকল্প কেবল তিনি-ই
শ ম রেজাউল করিম, আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আওয়ামী নেতার ভিড়Ñ পীর হাবিব এর চমৎকার লেখাটা পড়ে ভাবছি কোথায় ছিলেন ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বা তার পর? কেন আওয়ামী লীগ ভেঙে দুর্দিনে ‘মই’ মার্কা আওয়ামী লীগ, বাকশাল, গণফোরাম করে দলকে ক্রান্তিকালে আরও দুর্বল করা? কেন ২০০৭ এর ১/১১ পরবর্তীতে দলের কান্ডারি শেখ হাসিনার বিপক্ষে যাওয়া? ভবিষ্যৎ বলে দিবে, কোন নেতা দুর্দিনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন। তবে, শেখ হাসিনাই প্রমাণ করলেন, বঙ্গবন্ধুর বিকল্প কেবল তিনি-ই।
অসত্য প্রপাগা-ারও একটা
সীমা থাকা উচিত
গোলাম মোর্তোজা, সম্পাদক, সাপ্তাহিক
ভাড়াটে বিশেষজ্ঞ আবার এসেছে। আগেরবার তথাকথিত এই বিশেষজ্ঞ তত্ত্ব নিয়ে এসেছিল, সুন্দরবনের পাশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প-কারখানা হলে সুন্দরবনের উপকার হবে। এবার এসেছে, সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে নাকি ‘ধোঁয়া’ প্রায় বের হয় না বললেই চলে! অসত্য প্রপাগা-ারও একটা সীমা থাকা উচিত। জার্মানির কোলনের সুুপার ক্রিটিক্যালল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপরেও বিশাল এলাকাজুড়ে ধোঁয়ার মেঘ জমে আছে। সাদা চোখেই তা দেখা যায়, এর জন্যে তথাকথিত বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হয় না। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, আপনারাই শুধু বিভিন্ন দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখেছেন, আরও অনেকে দেখেছেনÑ আমরাও দেখেছি।
সুতরাং ভাড়ায় এসে অসত্য বলার আগে, আয়নার সামনে দাঁড়াবেন। রামপাল বিরোধিতাকারীদের প্রায় সবাই নাকি জামায়াত। শুনতে তো ভালোই লাগে সুফিয়া কামালের মেয়ে সুলতানা কামালও জামায়াত, জামায়াতের নেতা! কারণ তিনিও তো সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনের একজন নেতা। যুক্তি না থাকলে কতকিছু বলতে হয়।
ভুল করে ভুল নগরে এসে পড়েছি
স্বকৃত নোমান, কথাসাহিত্যিক
ভুল করে ভুল নগরে এসে পড়েছি। জেলে হওয়ার কথা ছিল অথবা পারাপারের মাঝি। আদিম পদার্থের সঙ্গে যাদের নিত্য বসবাস। অথবা কৃষক, যার হাতের ছোয়ায় সোনার ধান ফলে। অথবা বাউল, একতারা হাতে যে ঢুকে যায় মননের গোপন মহলে। জ্ঞানেই কি মুক্তি? সর্বাংশে সত্য নয়। গাঁয়ের এক বুড়োকে চিনতাম, যে কিনা পিপড়ার সারি দেখে বলে দিতে পারতেন বন্যা সমাগত। ফড়িংয়ের উড়াউড়ি দেখে বলে দিতেন, বৃষ্টি সমাগত। শকুনের পাল দেখে বুঝতেন, জনপদে রোগ-ব্যাধি হানা দেবে। তার তো পুঁথিগত বিদ্যা নেই, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তাই বলে তিনি কি জ্ঞানী নন? কে করবে অস্বীকার?
মানুষ যে রহস্যের আধার, জ্ঞান এই আধারের ঢাকনাটা উন্মুক্ত করে দেয়। ফলে রহস্য আর থাকে না কিছু। তার ভিতর আর কৌতূহল থাকে না। কৌতূহল থাকতে হয়। নইলে মানুষ হয়ে পড়ে জড়। মানুষও প্রকৃতির সন্তান। সাপ যেমন, বিচ্ছু যেমন; জোঁক, তক্ষক, বালিহাঁস যেমন। মানুষকে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে হয়। নইলে সে হয়ে পড়ে যন্ত্র। অথচ কী আশ্চর্য, যন্ত্র হওয়ার জন্যই আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা। আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না, এই প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আমরাই আমাদের কবর খুঁড়ে চলেছি। আমরা আসলে একেকজন গোরখোদক।
সেটা মূলত ইংলিশরাই
করেছেন
ফিরোজ আহমেদ, কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন
মানিকগঞ্জ থেকে ফিরছিলাম আবু বকর রিপনের সঙ্গে, চোখ বোলাচ্ছিলাম ইএসপিএন এর ধারাবিবরণী আর মন্তব্যগুলোতে। একটু অস্বস্তি হচ্ছিল অনেকক্ষণ ধরে, মনে হচ্ছিল বর্ণনাটা দেওয়া হচ্ছিল প্রধানত কেবল ব্রিটিশ পাঠকের জন্য, প্রতিটা বলের পর জানতে পারছিলাম ইংলিশ খেলোয়াড় কেমন খেলল, জিততে হলে তাদের কি করতে হবে এবং কতদূর তারা এগিয়েছে। অথচ ইংলিশদের নিয়মিত উইকেট পতন খেলাটাকে বেশিরভাগ সময়েই বাংলাদেশের পক্ষেই রেখেছিল, ক্রিকেটের অনিশ্চয়তা আর উত্তেজনাসহই।
বাটলার প্রসঙ্গটা আসতে বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া গেল। খেলাটা দেখতে পাচ্ছিলাম না, পড়তে হচ্ছিল, ফলে দৃশ্যটা কল্পনা করা কঠিন ছিল। কিন্তু ইএসপিএন জানতে চায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা কি করেছিল যে বাটলার তেড়ে যেতে বাধ্য হলেন! একজন ভদ্র ‘বাঙালি’র মন্তব্যও দ্রুতই জুড়ে দেওয়া হয়, যিনি বাকি জাতির তরফ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে জানান যে, সাধারণত বাঙালিরা এমন নন। আরেকজন ভিনদেশি কেউ দুঃখ করে বললেন যে, আচরণগত দিক দিয়ে বাংলাদেশের মুখে তিনি অস্ট্রেলিয়ার চেহারা দেখতে পাচ্ছেন বা এমন কিছু একটা।
অপরাধমূলক কিছু যদি কেউ করেই থাকে, সেটা মূলত ইংলিশরাই করেছেন। হিতাহিত জ্ঞান হারাবার কারণ হিসেবে বাটলার পরে বলেছেন, খেলাটা আবেগের। না বলা সত্যটুকু হলো, এত ছোট দলের কাছে হারলে আবেগ আহত হয়। একই কারণেই বড় দল হয়ে উঠতে থাকা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্যাপন তার কাছে আতিশয্য বলে মনে হয়েছে এবং এটাই হলো তার নিয়ন্ত্রণ হারাবার মুহূর্ত।
পুরনো জমিদার প্রজার উত্থানে যে অনুভূতির আক্রমণের শিকার হন, সেটাই আমরা দেখলাম। খেলাধুলায় তাও অনেক ভদ্রস্থ কায়দায় মানুষের এই উত্তেজনা প্রকাশিত হয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এরই প্রকাশ ঘটে হিংস্রতায় এবং বশ্যতায়।
এর আগে কখনো মনে হয়নি, কিন্তু সেদিনই প্রথম মনে হলো, ছোটবেলা থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের ভদ্রতার, সততা এবং আত্মসংবরণের (স্টিভ ওয়াহকে ঘুষি মেরে ফেলে দেওয়ার বাসনা প্রকাশের গল্পটাও আসলে কতটা উস্কানির শিকার হয়েছিলেন বলেই এমব্রোসের মতো লাজুক ও বিনয়ীও এমন করতে পারেন, তারই বহিঃপ্রকাশ) যে প্রশংসা বিশ্বব্যাপী ছিল, সেটার চর্চা যেমন তারা জাতিগতভাবে করেছেন, তেমনি তার একটা নির্মাণও সম্ভব হয়েছিল আন্তর্জাতিক প্রচারণার মাঝে।
তারা কালো, ভালো খেললেও খুব বিনয়ী, অহঙ্কারি নন মোটেওÑ এই ভাবমূর্তি হয়তো সাহেবের সম্মান রক্ষার প্রকল্পেরই অংশ ছিল। এটা মার্কিন শিক্ষিত কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝেও খুব দেখা যায় বলে শুনেছি, ছোটদের গালি না দেওয়ার শিক্ষার বিষয়ে কিংবা ধর্মকর্মের প্রতি তারা বেশি মন দিতেন এই সামাজিক নির্মাণের কারণেই। চামড়ার রঙ কালো হলেও ভব্যতায় তারা এগিয়ে, এই কৌশলেই তাদের আত্মরক্ষা করতে হয়েছে। আজও তাই মার্কিন নাগরিকরা বৈধ অস্ত্র রাখার বিষয়ে অগ্রসর হলেও কৃষ্ণাঙ্গরা সাধারণত এটা কম করেন।
জগতের চাকা ঘোরে বলেই যৌথ আচরণেও স্থান-কাল-পাত্রের ব্যাকরণ বদলায়। টাকা আর বাজারের জোরে যেমন ভারতীয়রা এখন অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের সঙ্গে মিলে ক্রিকেটের দুনিয়ায় বাকিদের শাসন করছে। নতুন কারো উত্থান সেই ত্রয়ী শাসনকে অস্বস্তিতে ফেললে প্রতিক্রিয়ার ধরনেও তার বহিঃপ্রকাশ দেখা যাবে বটেই। যে ছেলেটার পিঠ চাপড়ে দিতাম সেদিনও, সে হারিয়ে দিচ্ছে আমাকেই, এটা মেনে নিতে বেশ সময় লাগে।