আপাতত হামলার আশঙ্কা নেই হলি আর্টিজানেই শেষ জঙ্গিদের মিশন
আজাদ হোসেন সুমন: হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায়ই শেষ হয়ে গেছে জঙ্গিদের মিশন। নিকট ভবিষ্যতে দেশে জঙ্গিবাদের কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা এমনটাই মনে করছেন।
সূত্রের দাবি, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশি, ২ পুলিশসহ ২২ জনকে হত্যা করে যেভাবে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে হেনেছিল বড় ধরনের আঘাত। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও সরকার তা কোনোরকমে সামাল দেয়।
হলি আর্টিজান হামলার ঘটনাকে সরকার সিরিয়াসলি হ্যান্ডলিং করে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নিজে ‘ইনভল্ব’ হন এবং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ড্রাস্টিক অ্যাকশন নেয়ার জন্য সব ‘ল’এন ফোর্সিং’ এজেন্সিকে নির্দেশনা দেন। থেমে থাকেনি দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গড়ে তোলা হয় শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক। পুলিশ বাহিনীও তাদের সর্বোচ্চ সোর্স ব্যবহার করে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে। ‘যেখানেই জঙ্গি সেখানেই পুলিশ’ এই মন্ত্রের দীক্ষা নিয়ে পুলিশ প্রথমইে রজধানীসহ সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী ‘কম্বিং অপারেশন’ শুরু করে। এ অভিযান চলাকালে পুলিশ মিরপুর থানার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায়। এই অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হলেও এক জঙ্গিকে আহত অবস্থায় পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিদের থলের বেড়াল বেরিয়ে আসে। এখান থেকেই জানা যায় মাস্টারমাইন্ড তামিমসহ অন্যান্য ও জঙ্গিদের কথা। বেরিয়ে আসে রাজধানীতে বিস্তার করা জঙ্গিজালের নেপথ্য কথা। এরপর র্যাব পুুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত অভিযানে মিরপুরের রুপনগর, পল্লবীর রুপনগর, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ও নারায়ণগঞ্জে পাইকপাড়া, রাজধানীর আজিমপুর, সর্বশেষ গাজীপুরের পাতারটেক, হাড়িনাল ও টাঙ্গাইলের কাগমারীতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে কমপক্ষে ৩৪ জঙ্গি নিহত হয়। ৩ নারী জঙ্গি ও এক কিশোরসহ ১০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে রাজধানীসহ দেশে সেট করা পুরো জঙ্গি নেটওয়ার্ক অনেকটাই ‘ল’এনফোর্সিং এজেন্সি’ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। পুলিশ নিজেদের ভাষায় যাকে বলছে, ৭০, ৭৫ ও ৯০ শতাংশ জঙ্গি দমন হয়ে গেছে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সম্প্রতি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ৭০ শতাংশ জঙ্গি দমন হয়ে গেছে। আইজিপি এ প্রতিবেদককে প্রায় ২ সপ্তাহ আগে বলেন, ৭৫ শতাংস জঙ্গি দমন হয়ে গেছে। গত সোমবার রমনাকালী মন্দিরে পূজামন্ডপের নিরাপত্তা পরিদর্শন করতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, পূজামন্ডপে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা নেই। এ সময় দেশ থেকে ৯০ শতাংশ জঙ্গি নির্মূল হয়ে গেছে বলেও তিনি দাবি করেন।
সিআইডি অতিরিক্ত ডিআইজি এসএম কামালউদ্দিন গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, জঙ্গিরা ঘাপটি মেরেছিল। তারা অবাক করে দিয়ে গুলশানের রেস্তোরাঁয় বড় আঘাত হানে। এরপর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দিয়ে যে কোনোমূল্যে দেশ থেকে জঙ্গিদমনের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। এখন কিন্তু জঙ্গিরা পালাবার পথ পাচ্ছে না। হামলার পরিকল্পনাতো দূরের কথা নিজেরাই এখন ব্যাগ অ্যান্ড ব্যাগেজ দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করছে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম