২২ ঘণ্টার সফরে শুক্রবার আসছেন শি জিনপিং বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণে বাংলাদেশ চীন নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: ২২ ঘণ্টার সফরে শুক্রবার ঢাকা আসছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। ৩০ বছর পর কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ শীতল সম্পর্কের পর শি’র এই সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সরকার।
ঢাকা ও চীনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণে শি’র এই সফর নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সফরকে মাইলফলক বলে আখ্যায়িত করেছে বলে চীনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কে তাদের ওয়েব সাইটে বলেছে, সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও অন্তত ২০টি বড় উন্নয়ন পক্ষে চীনা অর্থায়নের ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর করবেন ঢাকা ও বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা। সব মিলিয়ে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন অর্থ-সহায়তা আসতে পারে বলে জানা যায়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লি জিন পিং এর আসন্ন ঢাকা সফরকে দুই দেশের সম্পর্কের মাইলফলক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কং জুয়ানিউ সোমবার বেইজিং-এ একথা জানান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়াল আলম বলেছেন, ১৪ ও ১৫ অক্টোবর দুইদিনের সফরে চীনা প্রেসিডেন্টকে রাষ্ট্রীয় সফরকালে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া হবে। দীর্ঘ ৩০ বছর পর চীনা প্রেসিডেন্টের এই সফর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারেরই সফলতা। বিশ্ব রাজনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা জনগণ এরই মধ্যে টের পেয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়ানজিয়াং বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।
জানা গেছে, জিনপিং শুক্রবার ১৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে এগারোটায় বিশেষ বিমানযোগে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন থেকে ঢাকা এসে পৌঁছবেন। তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের আকাশ সীমায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে বিমান বাহিনীর তিনটি জেট বিমান অভ্যর্থনা দিয়ে নিয়ে আসবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে তাকে স্বাগত জানাবেন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ। বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার, ২১বার তোপধ্বনি, পুষ্পার্ঘ্য প্রদানের মাধ্যমে চীনা প্রেসিডেন্টকে বরণ করে নেওয়া হবে।
বিমানবন্দর থেকে তিনি যাবেন হোটেল লা মেরিডিয়ানে। বিকাল তিনটায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জিনপিং দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এরপর সেখানে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শি জিন পিং যাবেন বঙ্গভবনে। সেখানে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। সন্ধ্যা সাতটায় চীনা রাষ্ট্রপতির সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজ অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন শনিবার সকালে চীনা রাষ্ট্রপতি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি সম্মান জানাবেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সকাল সাড়ে দশটায় তিনি ভারতের গোয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি।
জানাগেছে, চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ১০০ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশ সফরে আসবেন। প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে এফবিসিসিআই’র প্রতিনিধিরা বৈঠক করবেন। ওইসব বৈঠকে তাদের যৌথ বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে।
কূটনীতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর দেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে শি জিনপিংয়ের সফর।
চীনের প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে কূটনীতিক বিশ্লেষক ওয়ালিউর রহমান বলেন, এ সফর বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী ঘটনা। চীন এশিয়া মহাদেশের অর্থনীতির জন্য অনেক বড় ফ্যাক্টর। সুতরাং এ সফর বিশেষভাবে বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে। সারা বিশ্বের নজর এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে। চীনের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও দ্রুত হবে। সরকার চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চীনের সহযোগিতা ছাড়া তা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ চীন বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক বড় বিনিয়োগকারী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে চীন ঘোষণা দিয়েছে। শি জিনপিং সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশে চীনে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশিষ্ট এ কূটনীতিবিদ।
জানাগেছে, প্রেসিডেন্ট লি ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কম্বোাডিয়া, বাংলাদেশ ও ভারত সফর করবেন। বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ায় দ্বিপাক্ষিক সফর এবং ভারতের গোয়ায় ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা-এই পাঁচ জাতির জোট ব্রিকস এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন