শোকাবহ আশুরা আজ
আজ বুধবার, ১০ মহররম। পবিত্র আশুরা। আরবিতে ‘আশারা’ মানে ১০। আরবি মহররম মাসের দশম দিনকে লোকেরা আশুরা বলে জানে। মুসলিম বিশ্বের কাছে দিনটি শোক ও বেদনার। আছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। ৬১ হিজরির এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র এবং হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতেমা (রা.)-এর পুত্র ইমাম হোসাইন (রা.)। অন্যায়ের প্রতিবাদে নবী পরিবারের ৭২ জন শহিদ হন এই দিনে।
এছাড়াও দিনটি মুসলমানদের কাছে নানা কারণে গুরুত্ব¡পূর্ণ। কারবালার বেদনাদায়ক ইতিহাস ছাড়াও দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় ১০ মহররমের এই দিনে পৃথিবীতে হজরত আদম (আ.) আগমন করেন। নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর শত্রু ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। নূহ (আ.)-এর নৌকা ঝড় থেকে রক্ষা পায়। দাউদ (আ.)-এর তাওবা কবুল হয়। আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেন। ঈসা (আ.)কে ঊর্ধ্বাকাশে আল্লাহর নির্দেশে এই দিনেই উঠিয়ে নেওয়া হয়। ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই দিনে রোজা রেখেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলকে ১০ মহররম রোজা পালন করতে দেখেছি। আর বলতে শুনেছি, রমজানের রোজা ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ের রোজার চেয়ে উত্তম মহররমের রোজা। মদিনায় হিজরতের পর যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ইহুদিদের এ মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখতে দেখলেন, তখন তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ইহুদিরা জানালো, এ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এ তারিখে ফেরাউন নীলনদে ডুবে মারা যায়। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) এ দিনটিতে রোজা রাখতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, আমরাও মুসা (আ.)-এর অনুসরণ করব। তোমাদের চেয়ে আমাদের অধিকার বরং বেশি। তিনি তখন থেকে মহররমের ১০ তারিখ রোজা রাখা শুরু করলেন এবং সবাইকে নির্দেশ দিলেন। (বোখারি : ১৮৬৫)।
আশুরার রোজার ফজিলত প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এ আশুরার দিন রোজা রাখার কারণে আল্লাহ তায়ালা বান্দার বিগত এক বছরের গোনাহ সমূহ মাফ করে দেন। (মুসলিম: ১১৬)। আশুরার রোজার বিধান মুফতিদের অভিমত হলো, কেউ যদি শুধু মহররম মাসের ১০ তারিখ রোজা রাখেন এবং এর আগে বা পরে একটি রোজা যোগ না করেন, তবে তা মাকরুহ নয়, বরং এতে মোস্তাহাব বিঘিœত হবে। কিন্তু প্রকৃত সুন্নত হলো- আগের ৯ মহররম বা পরের দিনের সঙ্গে ১১ মহররম মিলিয়ে মোট ২দিন রোজা রাখা।
আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা আশুরার শোককে শক্তিতে পরিণত করে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান। আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়েছে বিশেষ নিবন্ধ। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম