নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি কর্মকা- কোর্স শেষ না করেই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছে ৫১৬৬ শিক্ষার্থী
দেলওয়ার হোসাইন: জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স এবং মাস্টার্সের বিভিন্ন বর্ষের ৫১৬৬ শিক্ষার্থী কোর্স শেষ না করেই চলে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সম্প্রতি ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নজরে রেখেছে।
এবিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিবছরই কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করে থাকে। কি কারণে এবং কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেছে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার ভালো বলতে পারবেন। তবে জঙ্গি তৎপরতার কারণে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেনি।
রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, প্রথম বর্ষে যেসব শিক্ষার্থী ফলাফল ভালো করতে পারে না তারা শুরুতেই ঝরে যায়। অনেক শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও কারিকুলামের সঙ্গে খাপ না খাওয়াতে পারায় মাঝপথে কোর্স সম্পন্ন না করে চলে যায়। এসব কারণে চলতি বছরেও কিছু শিক্ষার্থী তাদের ভর্তি বাতিল করেছে।
তিনি বলেন, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এবার ক্রেডিট ট্রান্সফার করে বিদেশে অন্য কোনো ভার্সিটিতে চলে গেছে। এসব শিক্ষার্থী জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজস রয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থীর বৈধ কোনো ভিসা ছিল না। তারা পাকিস্তান, নাইজেরিয়া ও অন্য দেশ থেকে এসেছিল। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নর্থ সাউথের কর্র্তৃপক্ষকে তাদের চলে যাওয়ার জন্য কারণ জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যের মধ্যে বিবাদ, ফুল টাইমের চেয়ে পার্ট টাইমসের শিক্ষক বেশি, কোর্সের ধারণ ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর মতো অনিয়ম ও ঘাটতি রয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে খুঁজে পেয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে অনার্স ও মাস্টার্সের মোট ৫১৬৬ শিক্ষার্থী কোর্স সম্পন্ন না করেই চলে গেছে।
সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ১২ নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের জন্য তিন ঘণ্টা অতিরিক্ত আবশ্যিক কোর্স চালু, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ না করা এবং তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দ্রুত নিরসন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব জিন্নাত রেহানা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিজনেস ফ্যাকাল্টির ছাত্র নিবরাস ইসলাম, গত ১ জুলাই গুলশান হাঙ্গামার অন্যতম জঙ্গি। নিবরাসের মগজ ধোলাইয়ের জন্য দায়ী করা হয় তার বিভাগেরই শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমকে। ব্লগার রাজীব হত্যায় যুক্ত সাত শিক্ষার্থী আগেই বহিষ্কৃত। তারপর থেকেই জঙ্গি আখড়ার শিরোনামে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। বহিষ্কৃতরা ছিল ইলেক্ট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বা ইটিই আর ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা ইইই’র ছাত্র।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ৭ জুলাই ঈদের দিন হামলা চালাতে গিয়ে নিহত জঙ্গিও নর্থ সাউথের ছাত্র। বাকি দশ জঙ্গির মধ্যে দু’জন এখানকার। এসব ঘটনার পর এ ইউনিভার্সিটির অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে জঙ্গি চিন্তায় দিন কাটছে। এরপর ইউজিসির একটি প্রতিনিধিদল গত ১৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টি আকস্মিক তদন্ত করে। এর আগে গত বছরের ১৯ আগস্ট পরিদর্শন করে। এসময় বেশকিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়। এরপর মন্ত্রাণালয় কারণ দর্শানোর নোটিস দিলে প্রায় ১ বছর পর গত ১৪ জুলাই এর জবাব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম