বাড়ছে আয়ু ১১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচবে মানুষ!
নূসরাত জাহান : ফ্রান্সের জেনে ক্লামেন্ট ১৯৯৭ সালের ৪ আগস্ট ১২২ বছর বয়সে মারা যান। জীবদ্দশায় তিনি বিখ্যাত কেউ ছিলেন না। তবে মৃত্যুর পর বিখ্যাত হলেন। তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তি। মানুষের দীর্ঘায়ুর রেকর্ড গড়লেন ক্লামেন্ট।
ক্লামেন্টের মৃত্যুর পর কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করে আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিনের মানুষের বয়স বিষয়ক গবেষক ড. জান ভিজগ বলেন, ‘আমরা হয়তো তার মতো আর কাউকে পাবো না। এটা সত্য যে বিগত কয়েক দশক ধরে মানুষের আয়ু বেড়েছে। তবে আমরা গবেষণা চালিয়ে মানুষের দীর্ঘায়ুর সীমাটা জানতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘এটাই মানুষের বাঁচার সর্বোচ্চ সীমা। এখন থেকে মানুষ ১১৫ বছর বাঁচবে।’
সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘নেচারে’ ভিজগ ও তার শিক্ষার্থীদের করা এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। মানুষের আয়ু নিয়ে চলমান বিতর্কের ক্ষেত্রে এ প্রতিবেদনটিকে একটি শক্ত প্রমাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
মানুষের আয়ু নিয়ে গত ২৫ বছর ধরে গবেষণা করছেন শিকাগোর ইউনিভারসিটি অব ইলিনয়েস এর পাবলিক হেলথের অধ্যাপক এস জয় ওলশানস্কি। তিনি বলেছেন, ‘এ গবেষণার মাধ্যমে মানুষের আয়ুর একটা সীমা টেনে দেওয়া হচ্ছে জোর করেই। যেটা হয়তো সবক্ষেত্রে ঠিক নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের বায়োডারমোগ্রাফি সেন্টারের পরিচালক জেমন ডব্লিউ ভাউপেল অব্যশ মানুষের বয়সের কোনো নির্দিষ্ট সীমা থাকার বিষয়টি মানতে নারাজ। ভিজগের প্রতিবেদনটিকে তিনি ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘মানুষের জীবন সম্পর্কিত এ ধরনের ভুল তথ্য এ পর্যন্ত বহুবার প্রকাশ করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক, এ ধরনের ভুলে ভরা কাজ আবার নামিদামী সাময়িকীতেও প্রকাশ হচ্ছে।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গড় আয়ুর তথ্য-উপাত্তের তুলনামূলক গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর আগের তথ্য অনুযায়ী, উনবিংশ দশকে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া মানুষে গড় আয়ু ৫০ বছর। আর বর্তমান সময়ে জন্ম নেওয়া মার্কিনিদের গড় আয়ু ৭৯ বছর। সেখানে জাপানে গড় আয়ু ৮৩ বছর।
তবে ড. ভিজগ ও তার শিক্ষার্থীরা জন্ম ও মৃত্যুর সময় নিয়ে গবেষণা করে ভিন্ন তথ্য পেয়েছেন। তারা দেখেছেন, বেঁধে দেওয়ার সময়ের চেয়েও মানুষ বেশিদিন বাঁচে। ১৯২০ এর দশকে ফ্রান্সের নারীর গড়ে ৮৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতো। ১৯৯০ দশকে তাদের গড় আয়ু বেড়ে ১০২ বছরে দাঁড়ায়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে গড় আয়ু ১১০ বছরে দাঁড়াবে বলে তারা জানান।
ড. ভিজগ বিশ্বের ৪০টি দেশের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এ গবেষণা করে দীর্ঘায়ুর সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের আয়ু বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে ধূমপান ত্যাগ ও সুষম খাদ্যাভাস। এছাড়া জৈবিক কিছু কারণ রয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
ড. ভিজগ বলেন, বয়স বৃদ্ধির পিছনে ডিএনএ ও কিছু অণু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দায়ী। ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ ঠিক হয় খুব ধীরে। কোনো সময় এটা হয়ও না। যার ফলস্বরূপ মানুষ মারা যায়। ডিএনএ ক্ষয় রোধ করতে এবং দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে মাদক ছাড়তে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস। এফএ। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম