বেনাপোলেই কলকাতার বড় বাজার
হাসান আরিফ, যশোরের বেনাপোল থেকে ফিরে: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার বড় বাজারের পণ্য বেনাপোলেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা পুরোটাই অবৈধভাবে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের যে পণ্যই প্রয়োজন তার সবই কেনা যাচ্ছে বেনাপোল বন্দরের প্রবেশ পথে। এখানে প্রকাশ্যেই পণ্যের অর্ডার নেওয়া হয়। তবে সরবরাহ হয় রাতের আঁধারে। আর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশ।
প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সহায়তা করেছেন যশোর প্রতিনিধি জাহিদুল কবীর মিলটন।
বেনাপোল বন্দরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বন্দরের বাংলাদেশ অংশে কিছু লোক কাগজ-কলম নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ এসব লোকদের কাছে বিভিন্ন পণ্যের দাম জানতে চাইছেন। সঙ্গে সঙ্গেই তারা সে পণ্যের দাম বলে দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে কৌতূহল হলে বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বপাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা জানান। একই বিষয় বন্দরের ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো এলসি পণ্যের দরদাম নিয়ে কথা হয় তাদের মধ্যে।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব লোক কাগজ-কলম নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা মূলত ব্রোকার। এসব ব্রোকার ভারতীয় পণ্যের দাম বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে বলেন এবং দামে মিললে রাতের আঁধারে পণ্য বাংলাদেশে এনে দেন।
বিভিন্নভাবে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বাংলাদেশে ভারতের যেসব পণ্যের চাহিদা আছে ব্রোকাররা সেই পণ্যের দাম ভারতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জেনে নেন। অথবা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যে পণ্য চান তার দাম জেনে নেন। এরপর ব্রোকারের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে পণ্য এবং দাম ঠিক হলে ব্রোকারের কাছে টাকা পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে পুরোটাই চলে বিশ্বাসের উপর। এখানে কোনো রশিদের প্রয়োজন হয় না। ব্রোকার টাকা পাওয়ার পর তাদের সুবিধাজনক সময়ে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তে নিয়োজিত কতিপয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চোরাচালানি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য আনছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্রোকার জানান, শুল্ক দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করলে দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পড়ায় ব্যবসায়ীরা চোরাকারবারিদের দিকেই ঝুঁকছে। পাচারকারি সিন্ডিকেট মাত্র কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পণ্য কলকাতা থেকে বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে মাত্র তিন থেকে চার দিনে। গুদাম ঘরে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার পর টাকা পরিশোধ করারও সুবিধা রয়েছে। তবে বিশ্বস্ততা অর্জন করলেই কেবল টাকা পরে নেওয়া হয়। নয়তো আগেই টাকা দিতে হয়। সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি