ধর্ম শিখতে কেমন পীর ধরবেন, কী বলে ইসলাম?
রোকন রাইয়ান
পীরের বাংলা অর্থ জ্ঞানী বা অভিজ্ঞ মুরব্বি। যারা মূর্খ বা ইসলাম না জানা মানুষকে ইসলাম শেখাবেন। দীনের তালিম দেবেন। দেখিয়ে দেবেন ইসলামের সরল পথ। কিন্তু বর্তমানের ধোকাগ্রস্ত পৃথিবীতে পীরদের ক্ষেত্রে বিষয়টা হয় উল্টো। এখনকার হাতে গোনা কিছু পীর ছাড়া অধিকাংশই ব্যবসাকে পুঁজি করে পীরালি করেন। তাদের দরবারে ইবাদতের পরিবর্তে দেখা যায় খেল তামাশা, গাজা ও গানের আসরসহ পীরকে সেজদা করার মতো কুফরি অনেক কাজ। যা মানুষকে ধর্মে প্রবেশ করানো দূরের কথা ছিটকে দিচ্ছে ইসলাম থেকে।
ঢাকার দোহারে গত সপ্তায় এমন এক পীরের দেখা পেয়েছে দেশবাসী। একটি টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়েছে দোহারের ওই পীরের কর্মকা-। মানুষকে কিভাবে ধর্মের নামে অধর্মের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন সেই চিত্র দেখে দেশের আলেম ওলামাসহ সাধারণ ধর্ম জানা মানুষও বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে। সেখানে পীরকে সেজদা করত মুরিদরা। এমনকি কাবা শরিফ বানিয়ে হজও করানো হচ্ছে মুরিদদের। এক ঘণ্টায় মুরিদরা হাজি বনে যাচ্ছেন।
এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য হজবাবা নামের ওই পীর যেমন দায়ী সমান দায়ী তার কাছে যাওয়া সরলমনা মানুষও। কারণ ইসলামের বিধান সুস্পষ্ট এবং সবই মানুষের সামনে রয়েছে। এর পরও যাচাই-বাছাই না করে ধোঁকাবাজদের ফাঁদে পা দেয়া দুঃখজনক।
আমাদের সমাজের বহু মুসলিম ভাই-বোন রয়েছে যারা বিশ্বাস করেন পীর না ধরলে জান্নাত লাভ করা অসম্ভব। তাই তারা ছুটছেন কোথায় পীর সাহেবের বাসা। এসব খোঁজতে গিয়ে কোনো বাছবিচার করছেন না। আবার অনেক মানুষ এমন পীর খোঁজেন যে পীরের কাছে গেলে ইবাদত কম করতে হয়। প্রকাশ্য নামাজ না পড়ে দিলের নামাজ পড়লেই পাওয়া যায় আল্লাহর নাগাল। প্রকাশ্য পর্দা নয় মনের পর্দাই বড় এমন আজগুবি সব বিশ্বাস রাখেন। এখানে পীর মুরিদ দুই জনই সুবিধাবাদী।
হ্যাঁ অনেক ক্ষেত্রে পীর ধরাও জরুরি। যারা সাধারণ মানুষ তারা পীরের কাছে যাবেন ছহিহ ইসলাম শিখতে। তার আগে অবশ্যই দেখতে হবে সেই পীর শুদ্ধ আকিদার অন্তর্ভূক্ত কিনা। কারণ আল্লাহ মানুষকে এতটুকু বোধ দিয়েই জন্ম দিয়েছেন। এতটুকু যদি বাছ বিচার করা যেত তাহলে হজবাবার মতো ভ-পীরের উদ্ভব হতো না দেশে।
তাই একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই আমাদের জানা দরকার ইসলাম শিখতে কি ধরনের মানুষের কাছে যাবো। আর এ ধরনের ভ্রান্তি থেকে নিরাপদ থাকা বর্তমান সময়ে একেবারেই সহজ। কারণ এখন প্রতিটি পাড়ায় প্রতিটি গলিতে মসজিদ রয়েছে। আছে মাদরাসাও। সেখানে অভিজ্ঞ আলেম আছেন। যদি আপনার ইসলাম শেখার ইচ্ছা থাকে তবে অবশ্যই তাদের কাছেই প্রয়োজনীয় জিনিস শিখে নিতে পারেন।
অনেক পীর, বাবা মুরিদদের জান্নাতে নেয়ার গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। এদের থেকে একশ হাত দূরে থাকুন। কারণ মহান আল্লাহ সুরা ইনফিতারের ১৯ তম আয়াতে বলেছেন, ‘যেদিন কোন মানুষই একজন আরেক জনের কাজে আসবে না; আর সেদিন ফয়সালার সব ক্ষমতা থাকবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতে।’
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আজকে (কিয়ামতের দিন) তোমাদের কেউ কাউকে উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারবে না। আর আমি অপরাধীদের বলব-জাহান্নামের আগুনের স্বাদ গ্রহণ কর দুনিয়ায় যাকে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছ। সুরা সাবা: ৪২
সমাজের বহু মুসলমান মনে করেন পীর গায়েব জানে। এটিও চরম ভ্রান্তি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, ‘তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, এবং এক তিনি ছাড়া এ সম্পর্কে কারও জ্ঞান নেই।’ সুরা আল আনআম: ৫৯
আমাদের সমাজ আজ বিদায়াতে ভরপুর। সঠিক ইসলাম জানার মাধ্যমে আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হবে, যা এখন বাংলাদেশের মুসলিমদের জন্য অতি প্রয়োজন। বাংলাদেশে এখন অনেক ভ- এবং বিদা’তি পীর রয়েছে যারা আমাদের সঠিক ইসলাম থেকে শধুমাত্র দূরে সরিয়ে রাখছে না বরং আমাদের দেশের সহজ-সরল মানুষগুলোকে মাজারে-পীরের আসরে অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করে বিদাতি কর্মে লিপ্ত করছে।
আপনি যদি ইসলামের কোনো বিষয় নিয়ে কনফিউজড থাকে তবে অবশ্যই আশপাশের জ্ঞানিদের থেকে সেটি জেনে নিতে হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা যদি না জেনে থাক তাহলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর।’ সুরা নাহল: ৪৩
আলেমদের কাছ থেকে জানার পর রেফারেন্স মিলিয়ে যখন দেখা যাবে তা সহীহ তখন তা আমল করবেন। আর যখন দেখা যাবে তা সহীহ নয় তখন তা আমল করা যাবে না। এভাবেই একজন ব্যক্তি বুঝতে পারবে কে সত্তিকার অর্থে আলেম এবং কে ভ-। অথচ আমরা এটি না করে ভ- পীর-মাজার পুজারীদের কথা শুনে নিজেকে বিদাতি কর্মে লিপ্ত করি।
মাজারে সিজদা দেওয়া, গানের আসর জমিয়ে গাঁজাখানার আড্ডা এগুলো রাসুল সা. এর সুন্নাহ’র পরিপন্থী এবং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এগুলো করা কবিরা গুনাহ এবং স্থান বিশেষে কুফরিও। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘সাবধান! তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহ মসজিদ (সিজদার স্থান) হিসেবে গন্য করতো। তবে তোমরা কিন্তু কবর সমূহকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদের নিষেধ করে যাচ্ছি।’ মুসলিম, ১০৭৭
এসব ভ- পীর বা মাজারের মৃত ব্যক্তি কাউকে বেহেশত দিতে পারবে না। আপনার নেক কর্মই আপনাকে জান্নাত নিশ্চিত করতে পারে। তাই সহীহভাবে ইসলাম অন্বেষণ করা এবং সে অনুযায়ী আল্লাহ’র আনুগত্য করা প্রতিটি মুসলিমের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। আসুন আমরা সেভাবেই ইসলামকে মানি এবং আল্লাহকে তালাশ করি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক