বাঙালি মুসলমানের জীবনে হিজরি সনের প্রভাব
আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
হযরত ওমর ফারুক রা., হযরত আবু মুসা আশ’আরী রা., হযরত আলী রা এবং হযরত ওমমান রা.এর যৌথ প্রচেষ্টায় ১৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে হিজরি সনের প্রচলন শুরু হয়। যা বর্তমান বিশ্বের প্রায় দেড়শ’ কোটি মুসলমানের কাছে অতীব মর্যাদাপূর্ণ এক আমানত।
হিজরি সন ও তারিখের গুরুত্ব মুসলিম জীবনে অনস্বীকার্য। কেন না হিজরি সন এমন একটি সন, যার সাথে সম্পৃক্ত বিশ্ব মুসলিমের তাহজিব-তামাদ্দুন। এছাড়াও রাসূল সা. এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনাবলী যেনন- বদর, খন্দক, তাবুক,প্রভৃতি যুদ্ধ, রাজ্য জয় এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলী হিজরি সনের সাথে সম্পৃক্ত। সম্পৃক্ত ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানও। যেমন- রোজা, হজ, ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর, শবে মিরাজসহ ধর্মীয় নানান আচার-অনুষ্ঠান। হাদিসে এসেছে, তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোযা ভাঙ্গ। (মুসলিম: ১/৩৪৭)
বাংলাদেশে হিজরি সনের ব্যাপক প্রচলন ঘটেছে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গ জয়ের পর থেকে। ১২০২ খ্রিষ্টাব্দে বখতিয়ার বঙ্গ জয়ের সময় হিজরি সনের বয়স ছিল ৬০০ বছর। পনের শতকের দিকের এ দেশের বিভিন্ন স্থাপত্যেরর গায়ে হিজরি সনের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছিল। এক সময় মুসলমানদের দৈনন্দিন কাজে সন তারিখ গণনায়, আগে হিজরি সন ব্যবহার করে তার পরে বাংলা ইংরেজিকে উল্লেখ করা হত। কিন্তু বর্তমানে হিজরি সনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। হিজরি সনের নব আগমন উপলক্ষ্যে আমাদের মাঝে নেই তেমন কোনো আনন্দ উচ্ছ্বাস। নেই কোনো প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিশেষ কোনো আয়োজন। যেমনভাবে আয়োজন করা হয় ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ও নববর্ষের আগমনে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রতি এতটা অবজ্ঞা সত্যিই দুঃখজনক।
এটাকে কোনোভাবেই আধুনিকতা বলা যায় না। বরং নিজ ধর্ম ও ঐতিহ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াকে কেবল হীনমন্যতাই বলে। রাসূল সা. বলেছেন, ‘সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়, যে অন্যান্য জাতীর সাথে সাদৃশ্যতা বজায় রাখে। তোমরা ইহুদি বা নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখ না।’ (তিরমিযি: ২৮৯৫)
এখন একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন, পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা সন, পহেলা জানুয়ারি তথা ঈসায়ি সনে আমরা যেভাবে আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি ঠিক সেভাবে পহেলা মহররম তথা হিজরি নববর্ষে আমরা কি সেভাবে উচ্ছ্বাসিত হয়েছি? ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা বাঙালি যেমন সত্য, তার থেকে আরো সত্য আমরা মুসলমান।’ কাজেই একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বব্যাপি প্রচলিত ইংরেজির মতো নয়,বরনং তারচেয়েও অধিক হারে হিজরি সনের অনুসরণ করা সময়ের দাবি।
লেখক : ইমাম ও খতিব, আদ্রা জামে মসজিদ, কসবা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া।