৩ লাখ কমালেও সর্ববৃহৎই থাকছে চীনের সেনা বহর
ইমরুল শাহেদ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ স্মরণে আয়োজিত প্যারেড অনুষ্ঠানে গত সেপ্টেম্বর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি চীনের সেনা বহর থেকে তিন লাখ সেনা কমাতে চান। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বরাতে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) থেকে এ সেনা কমিয়ে পিএলএকে আরও বেশি ক্ষমতাশালী করতে চান।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীনের সেনা বহরের সদস্য সংখ্যা তিন লাখ কমিয়ে আনা হলেও তাদের সংখ্যাই থাকবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনা বহর। চীনের বর্তমান প্রকৃত সেনা সংখ্যা হলো ২৩,৬২,৪৬৩ জন। তার থেকে ৩ লাখ বাদ গেলে থাকবে ২০,৬২,৪৬৩ জন। এদিকে সেনা সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের সেনা সংখ্যা ১৪,৩১,৩৭৮ জন। এক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তাদের সেনা সংখ্যা ১৩,২৫,৮৩৬ জন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। এ দেশটির সেনা সংখ্যা হলো ১১,০৬,২৪৮ জন। পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাশিয়া ১০,৪০,৬৩৫ জন সৈন্য নিয়ে। ষষ্ট স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। মার্কিন সমর্থিত এ দেশটির সৈন্য সংখ্যা ৬,৮৭,৪৭৬ জন। সপ্তম স্থানে রয়েছে তুরস্ক। এ দেশটির সৈন্য সংখ্যা হলো ৬,৬৪,৫৩৯ জন। পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা হলো ৬,১৭,২০৪ জন। পাকিস্তানের অবস্থান আটে। নবম স্থানে রয়েছে ইরান। দেশটির সৈন্য সংখ্যা ৫,২৩,৬২৫ জন এবং ৪,৬৮,৮৩০ জন সৈন্য নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে মিসর।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঘোষণার পর ৪ সেপ্টেম্বর সাউথ চায়না পোস্ট এবং হংকংয়ের একটি ইংরেজি দৈনিক উল্লেখ করে, নতুনভাবে পদাতিক বাহিনীকে এভাবে ঢেলে সাজাতে গেলে জুনিয়র ও সিনিয়র মিলিয়ে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার সেনা বেকার হয়ে পড়বে। কিছু সেনা বাহিনীকে বিমান অথবা মেরিন সেনাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যুদ্ধ করে না এমন কিছু ইউনিট – যেমন আর্টিস্ট ব্রিগেড, মেডিকেল ও যোগাযোগ থেকে এক লাখ সেনা বাদ দেওয়া হবে। এ তথ্য জানিয়েছে পিএলএর বরাত দিয়ে এসসিএমপি। পদাতিক, বিমান এবং মেরিন সেনাদের পুরনো অস্ত্রশস্ত্র বাদ দিয়ে নতুন অস্ত্রে সজ্জিত করা হবে। সেনা বাহিনীকে এমনভাবে সাজানো হবে যাতে লোক লাগবে কম, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী হবে।
সেনা বাহিনীতে পরিবর্তন আনার চীনের বর্তমান উদ্যোগকে পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা উল্লেখ করছেন এভাবে, চীনের আছে ২৩ লাখ সেনা। দেশটি চাইছে, তাদের সেনা বাহিনী উন্নত প্রয্ুিক্ত, দক্ষ এবং ক্ষমতা দেখাতে সক্ষম করে তুলতে। কেউ কেউ এ পরিবর্তনকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখছে।
তারা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট সেই সব সেনাদেরই কমাতে চাইছেন যারা অবসর পাওয়া নেতা জিয়াং জেমিনের অনুসারী। চীনা রাজনৈতিক ভাষ্যকার শি শি নিউইয়র্ক ব্রডকাস্টার নিউ ট্যাং ডাইনেস্টি টেলিভিশনকে (এনটিডি) বলেছেন, আসলে চীন দুর্নীতিবাজ সেনা কর্মকর্তাদেরই কমিয়ে ফেলবে। পিএলএর জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পাদকীয় প্রধান জিন জিলিং এনটিডিকে বলেছেন, ‘গুয়ো বক্সিওয়ং এবং শু কাইহো নিয়ন্ত্রণে থাকা সেনা বাহিনীর মধ্যে ব্যাধির মতো দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দুজনই ছিলেন কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের ডেপুটি। তারা সম্প্রতি অর্থের বিনিময়ে সামরিক পদ বিক্রি করছেন। এভাবে তারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। শি জিনপিংয়ের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এসব ধরা পড়েছে। তবে এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে দল থেকে জিয়াংয়ের লোকজন মুক্ত করে নিজের লোক ক্ষমতায় বসিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করাই হচ্ছে প্রেসিডেন্টের মূল উদ্দেশ্য। সম্পাদনা: হাসান আরিফ