আওয়ামী লীগের স্মরণকালের জমকালো জাতীয় সম্মেলনে সাজবে সারা দেশ
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। জমে উঠেছে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানম-ির কার্যালয়। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন হবে স্মরণকালের সবচেয়ে জমজমাট। সারা দেশের জেলা, উপজেলা প্রতিটি নির্বাচনি এলাকা সম্মেলন উপলক্ষে সাজানো হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা সাজানোর জন্য পৌঁছে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় পোস্টার এবং সিডি। সংসদ সদস্যদের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিটি নির্বাচনি আসনে জাতীয় সম্মেলনের আবহ সৃষ্টি করতে। রাজধানীর গুরুত¦পূর্ণ স্থাপনাসহ ফ্লাইওভার প্রবেশদ্বারে আলোকসজ্জা করা হচ্ছে। বড় বড় এলইডি স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে দলটির ইতিহাস-ঐতিহ্য, অর্জন ও উন্নয়নের চিত্র। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল আকারের মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা আসছেন সম্মেলনে।পদ প্রত্যাশী নেতারা ব্যস্ত দলীয় সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাজনৈতিক ময়দান নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্য নিয়েই দলের স্বচ্ছ, ত্যাগী এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে গঠন করা হবে আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি।
জানা গেছে, দলীয় সভাপতি আবারও হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থাকছেন বর্তমান কমিটির মাহবুব উল আলম হানিফ। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য এবং প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্মেলনে উপস্থিতি নতুন মাত্রা যোগ করবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল আভাস দিয়েছেনÑ তিনিও কার্যনির্বাহী কমিটিতে আসছেন।
সূত্র জানায়, ৬ সহস্রাধিক কাউন্সিলর, ৩০ হাজার ডেলিগেট এবং বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক নেতা, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনী ভাষণ এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের রিপোর্ট পেশ করার পর বিদেশি অতিথিরা বক্তৃতা করবেন। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে দুদিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২৩ অক্টোবর সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে মূল কাউন্সিল অধিবেশন। এ সময় জেলা নেতাদের বক্তব্য শুনবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এ অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হবে। জানা গেছে, কাউন্সিলরদের তালিকা দ্রুত পাঠাতে গত সপ্তাহে প্রতিটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তবে অনেক জেলায় এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় কাউন্সিলরের তালিকা করতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার নেতারা।
জাতীয় সম্মেলনকে সার্থক করতে ব্যস্ত প্রতিটি সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটির সদস্যরা। জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে দলটির ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাশাপাশি সরকারের সাফল্যগাঁথা তুলে ধরা হবে। এরই মধ্যে দুই ধরনের পোস্টার ছাপা হয়েছে। সম্মেলনের পোস্টার সারা দেশে পাঠানো হয়েছে।
সম্মেলনে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। আলোকসজ্জা করা হবে পুরো রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ প্রবেশপথে। ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখানো হবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সব উন্নয়ন। এরই মধ্যে সেসব ডকুমেন্টারি নির্মাণ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বর্ণাঢ্য মূলমঞ্চ তৈরির কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সম্পাদকম-লী ১৫ সদস্যবিশিষ্ট, যা আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে ১৭ সদস্যের হতে পারে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি হবে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট। কার্যনির্বাহী কমিটি প্রেসিডিয়াম, সাংগঠনিক এবং সম্পাদকীয় পদে আসছেন বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ এবং ত্যাগী স্বচ্ছ আওয়ামী লীগ নেতা। কার্যনির্বাহী প্রেসিডিয়াম পদে নতুন করে আসতে পারেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, বর্তমান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ সিকদার, সিলেট অঞ্চল থেকে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। বর্তমান কমিটি থেকে যারা পদোন্নতি পেয়ে সম্পাদকম-লীতে যুক্ত হতে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আসাদুজ্জামান নূর, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, খায়রুজ্জামান লিটন, ড. আবদুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) ফারুক খান ও ডা. দীপু মনি।
দলীয় সাংগঠনিক সম্পাদকে বড় ধরনের রদবদল হতে যাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বাড়ছে পদের সংখ্যাও। এ পদের জন্য নতুন করে আসতে পারে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান হুইপ ইকবালুর রহিম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার।
সূত্র জানায়, সম্পাদকীয় পদে আসতে পারেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, শেখ ফজলে নূর তাপস, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র। সম্মেলনের মাধ্যমে বাড়ছে কার্যনির্বাহী সদস্য পদেরও সংখ্যা। আসছে নতুন তারুণ্যের মুখ। কয়েকজন সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্য নাঈম রাজ্জাক, জাহিদ আহসান রাসেল, কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা, ইসরাফিল আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফি আহমেদ, শাহে আলম, প্রকৌশলী আখতারুল আলম, মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, ইসহাক আলি খান পান্না, লিয়াকত সিকদার, মাহবুবুল হক শাকিল, সাইফুজ্জামান শেখর, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, মারুফা আখতার পপি, মনিরুজ্জামান মনির, পঙ্কজ সাহা, বদিউজ্জামান সোহাগ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, মেহের আফরোজ চুমকি, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে সদস্য পদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ সাতটি। ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাড়বে। এছাড়া ফরিদপুর ও কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগ হবে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটি থেকেই পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে গঠন করা হবে উপদেষ্টা কমিটি এবং কেন্দ্রীয় উপকমিটি। এই দুই কমিটিতে জায়গা করে নেওয়ার জন্য চলছে জোর তৎপরতা। জানা গেছে, আগামীতে কেন্দ্রীয় উপকমিটির সংখ্যা সীমিত রাখা হবে। অযোগ্য এবং পার্টির কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এমন অনেকে উপকমিটির সহ-সম্পাদক পদ থেকে বাদ পড়বেন। সাবেক উদ্যমী ছাত্রলীগ নেতা এবং পেশাজীবীদের মধ্যে থেকেই এ কমিটি গঠিত হবে।
জাতিসংঘ অধিবেশন শেষে দেশে ফিরে ২ অক্টোবর গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দলীয় ডেলিগেট ও কাউন্সিলররা তাদের পছন্দমতো নেতা নির্বাচন করবেন। আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলের মাধ্যমেই সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে সব কিছু নির্ধারিত হবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের প্রস্তুতি শেষপর্যায়ে। স্মরণকালের সবচেয়ে জাঁকজমক হবে এ কাউন্সিল। বিদেশি অতিথি আসার সিদ্ধান্ত সময়মতো সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। জামায়াত ছাড়া সব রাজনৈতিক দলকে এ কাউন্সিলে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
আওয়ামী লীগের অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত উন্নত বাংলাদেশ, আগামী নির্বাচন এবং রাজনৈতিক যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়টি লক্ষ্য রেখে আগামী কাউন্সিলের মাধ্যমে দক্ষ একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। সম্মেলনের দুদিন আগেই সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সাজসজ্জা উপ-কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে সারা দেশে সম্মেলনের আবহ সৃষ্টি করা হবে। কীভাবে জেলা-উপজেলা সাজাতে হবে এর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পোস্টার ও সিডি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, তিন দফা তারিখ পরিবর্তনের পর আগামী ২২ এবং ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন।