‘চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফর প্রধানমন্ত্রীর দেশ পরিচালনায় সফল নেতৃত্বের স্বীকৃতি’
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। এছাড়াও আশ্বাস পাওয়া যেতে পারে নানা সহযোগিতার। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের যেসব ব্যবসায়ীর, তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। চীনের প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে নিজের বিশ্লেষণে তার মতো করে বলেন, চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনায় সফল নেতৃত্বের স্বীকৃতি। উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ- এসব ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও চীনের বন্ধুত্ব বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কাম্য। আশা করি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর এ সফর দুদেশের সম্পর্ককে আরও গভীরতর করবে।
তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর দুদেশের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যায়। যোগাযোগ, জল-স্থল এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। চীনের সহায়তায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। চীন বাংলাদেশের স্বপ্নের অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। তাই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত অর্থবহ।
আবুল হোসেন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের কথা বলতে গিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। উভয় দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে গত তিন দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশের বেশকটি মেগা প্রকল্পে চীন অর্থায়ন করেছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে করেছে সমৃদ্ধ। বেশকটি উল্লেখযোগ্য সেতুও চীন তৈরি করে দিয়েছে- যা চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নামে পরিচিত। দুই দেশের মধ্যে চমৎকার কূটনৈতিক সম্পর্ক বিরাজমান।
আবুল হোসেন বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে, অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও চীন সহযোগিতা করে আসছে। প্রতিরক্ষা খাতকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সংযোগ করতে চীনের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নৌবাহিনীকে সমুদ্রপৃষ্ঠে যুদ্ধ করার উপযোগী নৌবহর, সমুদ্রতলে সাবমেরিন এবং আকাশে নৌবাহিনীর নিজস্ব জঙ্গি বিমান, সেনাবাহিনীর জন্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, বিমান বাহিনীর জন্য বোমারু বিমান সুসজ্জিত করে তোলার ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। নৌ-বাহিনীসহ সশস্ত্রবাহিনীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিতেও চীন এগিয়ে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের নিরিখে এ দুদেশের সম্পর্ক এক নতুন মাত্রা লাভ করেছে।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের অর্জনের বিষয়ে আবুল হোসেন বলেন, শিক্ষা, সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণ, প্রতিরক্ষা সমৃদ্ধির প্রতিটি অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে চীন। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন, সাংস্কৃতিক বিনিময়, সর্বোপরি, সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে দেশ দুটি। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের পদযাত্রায় বাংলাদেশকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে চীন।
চীনের অবদানের কথা বলতে গিয়ে আবুল হোসেন বলেন, অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ সাহায্য, কারিগরি সাহায্য, অনুদান, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানিসহ উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা পেয়ে এসেছে বাংলাদেশ। বিশেষত সামরিক সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র এবং সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উভয় দেশের সম্পর্ক আজ ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বোয়া ফোরাম ফর এশিয়ার মাধ্যমে চীন বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোর উন্নয়নে অবদান রাখছে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এ অঞ্চলের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে। উল্লেখ্য, বোয়া ফোরাম ফর এশিয়ার বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি সম্পৃক্ত রয়েছি।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, এশিয়ায় শান্তি আলোচনায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ চীন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক- এক যুগান্তকারী পদক্ষেপের নাম, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ চীনের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। অভিন্ন আকাক্সক্ষা তথা উভয় দেশের জনগণের উন্নত জীবনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও চীন। চীনের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে অনেক অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মৈত্রী সেতু ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র।
চীনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ দুটির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা, সামাজিক যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সামরিক বিক্রয়-সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ইতোমধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীনের অর্থনীতির ব্যাপক সমৃদ্ধি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রচুর বিনিয়োগ সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ-চীন: বন্ধুত্ব ও বিশ্বস্ততার অনন্য উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বহু শতাব্দী ধরে, বিশেষ করে, ৭ম শতাব্দী থেকে ১৪শ শতাব্দী পর্যন্ত চীন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর সভ্যতার ভূমি। আধুনিক সভ্যতার বিভিন্ন উপাদান যেমন- কাগজ, ছাপাখানা, বারুদ, চীনামাটি, রেশম এবং দিক নির্ণয়ী কম্পাস- সবই চীনে প্রথম উদ্ভাবিত হয় এবং সেখান থেকে বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। চীনের সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাসের পরিক্রমায় ১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করে ভূখ-ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন হলো শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে পরিচালিত এবং শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত জনগণতান্ত্রিক একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মৌলিক ব্যবস্থা।
আবুল হোসেন বলেন, চীন স্বাধীন আর স্বতন্ত্র শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। এই নীতির মৌলিক লক্ষ্য হলো- চীনের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভূ-ভাগের অখ-তা রক্ষা করা। পরস্পরের সার্বভৌমত্ব আর ভূ-ভাগের অখ-তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, পারস্পরিক আক্রমণ ও পরস্পরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা আর পারস্পরিক উপকারিতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতির ভিত্তিতে সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও তা সম্প্রসারণ করতে দুটি দেশই বদ্ধপরিকর। সম্পাদনা: মাহমুদুল আলম