চীনা রাষ্ট্রপতিকে অসাধারণ অভ্যর্থনা বাংলাদেশের
মাহমুদুল আলম: চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে বহনকারী বিমান আজ বাংলাদেশের আকাশ সীমায় পৌঁছা মাত্রই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি জেট বিমান তাকে প্রহরা দিয়ে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে দিবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে চীনা রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানানোর কথা রয়েছে। পরে বিমান বন্দরে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে চীনা রাষ্ট্রপতির আগমনকে সম্মানিত করা হবে। তাকে ফুল দিয়ে বরণ ও গার্ড অব অনার দেওয়ার পরে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে উঠবেন চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। বিমান বন্দর থেকে হোটেল পর্যন্ত চীনের প্রেসিডেন্টকে গাড়ি বহরের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানা যায়।
২২ ঘণ্টার সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা ছাড়াও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকারও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সফর শেষে আগামীকাল ১৫ অক্টোবর শনিবার সকাল দশটায় চীনা রাষ্ট্রপতি শি
জিনপিংকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিদায় জানাবেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সফরসূচি অনুযায়ী, আজ সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশে প্রবেশ করে
দুপুর ১২টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবস্থান করবেন
চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। এরপর তিনি বেলা ১২টা ৫ মিনিটে হোটেলে
পৌঁছবেন। বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে
অবস্থান করবেন চীনা রাষ্ট্রপতি। এ সময় প্রধামমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার
কার্যালয়ের লেভেল-১-এর চামেলী ভেন্যুতে দাফতরিক কথাবার্তা বলবেন দুই
সরকারপ্রধান।
আর ৪টা থেকে ৪টা ২৫মিনিট পর্যন্ত সময় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য নির্ধারিত আছে।
চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য লেভেল-১-এর করবী (টিবিসি) ভেন্যু নির্ধারিত আছে। পরে
৪টা ৩৫ মিনিটে আবার হোটেলে ফিরবেন চীনা রাষ্ট্রপতি। ৪টা ৪০ মিনিট
থেকে ৫টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পিকারের জন্য নির্ধারণ করা আছে। এ সময়
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাতটা পর্যন্ত চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বাংলাদেশের
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে তার কার্যালয় বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করবেন।
বঙ্গভবনের লেভেল-১-এর মন্ত্রিপরিষদ মিলনায়তনে এই সাক্ষাৎ হওয়ার কথা
রয়েছে। এরপর ৭টা থেকে ৭টা ৩০মিনিট পর্যন্ত বঙ্গভবনের দরবার হলে তার
সম্মানে আয়োজিত এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন তিনি।
আগামীকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে ৯টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত রাজধানীর অদূরে
সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে অবস্থান করবেন চীনা রাষ্ট্রপতি। সেখান
থেকে বাংলাদেশ ছাড়ার উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে
যাবেন তিনি। বিমান বন্দরে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বিদায়
জানাবেন।
এছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরে তার সঙ্গে বিএনপির
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও বৈঠক হবে। আজ শুক্রবার বিকাল পাঁচটায়
রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি
চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য
জানিয়েছেন।
এদিকে শি জিনপিংয়ের সফরকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর সড়কে বেশকিছু
পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই সড়কে চীনের রাষ্ট্রপতির চলাচল সহজ করতে
সড়ক বিভাজনের দুটি স্থান ভেঙে ইউটার্ন তৈরি করা হয়েছে। সড়কে থাকা
গতিরোধকও তুলে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ
সফর উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে আগামীকাল শনিবার সকাল
১০ পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়কের খিলক্ষেত ক্রসিং থেকে পদ্মা অয়েল ক্রসিং পর্যন্ত
সড়কের পশ্চিম অংশ বন্ধ রেখে পূর্ব অংশে যান চলাচল করবে।
চীনের রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো
হয়েছে রাজধানীর সড়ক দ্বীপসহ বিভিন্ন স্থান। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা এই
সড়কের কাজগুলো তত্ত্বাবধান করেছেন। ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা
গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট চলে যাওয়ার পর আবার সবকিছু
আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।
এছাড়া রাজধানীতে গত মঙ্গলবার শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী চীনা গ্রন্থ প্রদর্শনী।
যৌথভাবে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে চায়না ইন্টারন্যাশনাল বুক ট্রেডিং
কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। প্রদর্শনীর পৃষ্ঠপোষক
ইন্টারন্যাশনাল অফিস অব স্টেট কাউন্সিল অব পিপল রিপাবলিক অব চায়না ও
ঢাকায় চীনা দূতাবাস। সহ-আয়োজক চীনা ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশিং গ্রুপ।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার তৃতীয় তলায় এ প্রদর্শনীর
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির
প্রকাশনা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী থুও চেন। আরও ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের
রাষ্ট্রদূত মা মিং ছিয়াং, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির
সভাপতি এইচ এম আশিকুর রহমান প্রমুখ। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত