সার্কের দরজা খোলা থাকলেই ভালো বিমসটেক ও ব্রিকসকে স্বাগত জানিয়ে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : কূটনীতিকরা বলছেন, বিমসটেকসহ আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক জোটগুলো শক্তিশালী হলেও সার্কের দরজা যেনো খোলা থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বিমসটেক জোট শক্তিশালী করার পাশাপাশি সার্কও যেনো গতি পায় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখার অনুরোধ তাদের।
ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে ১৫ অক্টোবর ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে ১৬ অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক জোট সার্ক নিয়ে আলোচনা গুরুত্ব পাবে।
জানা গেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীরসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে ভারতের যুদ্ধাবস্থা চলছে। সেই কারণেই আগামী মাসে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলনে ভারত যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে এবং সঙ্গে বাংলাদেশ , আফতানিস্তান, ভূটান ও শ্রীলংকাও পৃথক কারণ দেখিয়ে এবারের সার্ক বর্জনের ঘোষণা দেয়। ফলে সার্ক স্থগিত করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান ও সার্কের চেয়ার নেপাল।
এদিকে এবারের সার্ক বাতিলের পরপরই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়-সার্কের দরজা বন্ধ করে আঞ্চলিক জোট বিমসটেককে বেশি কার্যকর ও শক্তিশালী করতে। যদিও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারত চায় বাংলাদেশ যেনো সার্ক বিষয়ে একেবারেই নেতিবাচক থাকে। পাকিস্তানকে একঘরে করতেই ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেখ হাসিনার গোয়ার সফরে এই বিষয়টি তাই এতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কারণেই সার্ক কাক্সিক্ষত গতি পাচ্ছে না। ব্যাপারটি দক্ষিণ এশিয়ার সবাইকে হতাশ করেছে। এই জোটকে সফল করতে হলে সদস্যদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য জোটগুলোকে সচল রাখতে হবে এ অঞ্চলের মানুষের স্বার্থেই।
আর সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, সার্কের এ অবস্থায় প্রত্যাশার জায়গায় একটু ঘাটতি আছে বলেই মনে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই জোটটি আক্ষরিক অর্থেই গতিশীল হলে উপকৃত হতো এই অঞ্চলের প্রায় পৌনে দুইশ’ কোটি মানুষ।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের অনাগ্রহ সত্ত্বে¡ও সার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তারা এটাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। এ জন্যই ভারত তাদের নেতৃত্ব ধরে রাখতে বিমসটেক গঠন করে। একইভাবে বিবিআইএনও গঠিত হয়। এগুলোর মধ্যদিয়ে মূলত সার্ককে অকার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। উচিত ছিল আঞ্চলিক জোট কার্যকর করা। তা না করে উপ-আঞ্চলিকের দিকে গেল। কারণ আধিপত্য ও অধীনতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। পাকিস্তানকে সরিয়ে দিতেই বিমসটেক করলো ভারত।
এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, সার্কের দুদর্শা হলো ভারতের কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ভাব নেই। অথচ সার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল গোটা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে চমৎকার পরিবেশ তৈরি করা। মূলত দুই বৈরী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সংকট সমাধানে সার্কই ছিল উপযোগী। এ ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভালো কথা বলেছেন। অন্য দেশগুলো বললে ভালো হয়। সার্ককে গতিশীল করতে হলে ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা আনতে হবে। সার্কের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সার্ককে বন্ধ করে দিয়ে এ অঞ্চলের উন্নতি সম্ভব নয়। উপ-আঞ্চলিক জোটগুলোও পারবে না।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, সার্কের ঘরের দরজা বন্ধ করে এ অঞ্চলের উন্নতি সম্ভব নয়। বরং সার্ক কার্যকর থাকলে বিশ্বের অন্যান্য জোটের চেয়ে এ অঞ্চলের মানুষ অনেক বেশি লাভবান হবে। কিন্তু সার্ক এ পর্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। আন্ত:রাষ্ট্রীয়, যোগাযোগ, অর্থনীতি, কোনোদিকেই সফল হয়নি। এর জন্য পাকিস্তানই নানাভাবে দায়ী। তবে এটি ঠিক যে, এ অঞ্চলের উন্নয়নে আন্ত:সহযোগিতা ছাড়া উপায় নেই। সে জন্যই অন্য জোটগুলোর কথা আসছে। বিবিআইএন কাজ শুরু করেছে। বিমসটেক আরও বড় জোট। শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থাকায় এ জোটের সঙ্গে আসিয়ানের মতো বড় জোটগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়তে পারে। এই বিশ্লেষক বলেন, সার্ক এখন ভেন্টিলেশনে, তবে তাকে মৃত ঘোষণা করা হবে না। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কারণে বাতিলও হবে না। হওয়া উচিতও নয়। সার্ক থাকতে হবে। তবে প্রয়োজন মেটাতে বিবিআইএন ও বিমসটেক সক্রিয় হতে হবে। এর ব্যাপক সম্ভাবনাও রয়েছে। সম্পাদনা : হাসান আরিফ