নির্দেশ অমান্যে আইনের আওতায় আনা হবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ট্রাকের অতিরিক্ত বাম্পার ও অ্যাঙ্গেল খুলতে হবে : সেতুমন্ত্রী
আনিসুর রহমান তপন: আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ট্রাকের অতিরিক্ত বাম্পার ও সাইড বডির অ্যাঙ্গেল অপসারণের নির্দেশ নিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়ক-মহাসড়কের রক্ষণাবেক্ষণে ট্রাকের ওজন নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ঘটনা রোধে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান। নির্দেশ অমান্য করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘মহাসড়কে মোটরযানের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ নির্দেশ দেন। এসময় তিনি বলেন, এরপর ১ ডিসেম্বর থেকে অতিরিক্ত বাম্পার ও সাইড বডির অ্যাঙ্গেল পাওয়া গেলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠকে নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সড়ক পরিবহন সচিব এমএএন সিদ্দিক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্যাহ, প্রাইম মুভার ট্রেইলর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, চার এক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাইম মুভারগুলো ৩২ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করতে পারবে। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত একটি এক্সেল লাগানো যাবে। এক এক্সেলের জন্য অতিরিক্ত ১০ টন, অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৪২ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করা যাবে। প্রাইম মুভার যানে অতিরিক্ত এক্সল লাগানোর জন্য আগামী ছয় মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তবে পাঁচ এক্সেলের চেয়ে বেশি বা ৪২ টনের বেশি পণ্য পরিবহন বিষয়ে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। পাঁচের অতিরিক্ত এক্সেল সংযোজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমিন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে প্রধান করে যে সাব-কমিটি গঠন করা আছে তার প্রতিবেদন দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সভায় আলোচনা চলাকালীন নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহনে নিয়োজিত প্রাইম মুভার ট্রেইলার ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক। দাউদকান্দি ও মেঘনা সেতুতে বসানো স্কেলে সরকার নির্ধারিত টোলের অতিরিক্ত টোল আদায়ে অনিয়ম ও চালক শ্রমিকদের হয়রানির অভিযোগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু করে সংগঠনটি। এতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি ও দেশের অভ্যন্তর থেকে বিদেশে রপ্তানি যোগ্য কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। ধর্মঘট স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রাইম মুভার ট্রেইলর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে বলেন, আপনাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মানা হবে। আলোচনার এ পর্যায়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যোগ দেন নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান ও বৈঠকে উপস্থিত গার্মেন্ট মালিক সমিতির নেতারা।
দুই মন্ত্রী ও গার্মেন্ট মালিক প্রতিনিধির চাপে অবশেষে ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেন, যান আপনাদের অনুরোধে এই বৈঠকেই ধর্মঘট প্রত্যার করলাম।
পরে সভাকক্ষের বাইরে উপস্থিত সাংবাদিকদের আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সাত দফা দাবি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করছি। আজকের মিটিংয়ের আলোকে বিজিএমইএ সভাপতি, সড়ক পরিবহন মন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রী, চট্টগ্রামের মেয়র, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার আমাদের এ সাত দফা দাবি পূরণ করে দেয়ার আশ্বাস দেয়ায় আমি আমার কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। সভায় সিটি করপোরেশনের কর ৫০০ টাকার স্থলে ১০ হাজার টাকা প্রত্যাহার, টার্মিনালের ব্যবস্থা করা, প্রাইম মুভার চালকদের ভারি যান চালানোর লাইসেন্স প্রদান, বিআরটিএ’র আইনে সংশোধনী আনার দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আবু বক্কর ছিদ্দিক। সভায় জানানো হয়, খাদ্য ও সার পরিবহনের ক্ষেত্রে ওজনসীমা পুন:র্নিধারণ করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সম্পাদনা : হাসান আরিফ