বাজিকর আপনি আমাকে হতাশ করেননি
হিন্দোল রায়
অমিতাভবাজির-শাওনবাজির-চঞ্চলবাজিরÑ ‘আয়নাবাজি’। বাজিকর মানে জাদুকর। ভানুমতির খেলা দেখ, জাদুকাঠির খেলা। প্রচারের জাদুতে দেখতে অস্থির হলাম, দেখার পর বুননের জাদুতে সকল ভুল-ত্রুটি ও ঈঙঘঞঊঘঞ এর সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে উত্তীর্ণ হয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য হলাম। সত্যিকারের জাদুকরের কৃতিত্ব এখানেই যে, আমরা জানি সব ভেলকিবাজি তারপরেও তার অসাধারণ পরিবেশনায় বিমোহিত হতে হয়। বাজিকর অমিতাভ রেজা চৌধুরী ‘একটি গোলফিস-এর আত্মকাহিনী’, ‘হাওয়া ঘর’ ইত্যাদি নাটক থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আপনাকে জানি। অনেকের মতো ভয়ে ছিলাম, অনেকদিন বিজ্ঞাপন নির্মাণের পেশার কারণে ১ম শ্রেণির শিল্পকর্মের অসম্ভব সম্ভাবনাময়ী শিল্পী ৪র্থ শ্রেণির শিল্পের মতো কর্মের (দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানো) নেশায় ধ্বংস হয়ে যায়নি তো? না বাজিকর আপনি আমাকে হতাশ করেননি। আপনার ভিতরে দীর্ঘ লালিত উদ্দেশ্য ও সাধনা যে সৎ ছিল তার প্রমাণ আপনি দিয়েছেন। প্রমাণ করতে সার্বিক সহযোগিতায় আপনার পার্থসারথী অনন্য জ্ঞানী গউসুল আলম শাওন-এর কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। না হলে এই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পার পেতে আপনার দুঃসাধ্য হতো।
অন্যতম সহযোদ্ধা ঈযধহপযধষ ঈযড়ফিযঁৎু স্যালুট আপনাকে। অনেক নাটকে কো-অ্যাক্টর হিসেবে আপনার সঙ্গে অভিনয় করে বুঝেছি, আপনি অনেক গুণী অভিনেতা। কিন্তু এবার যেন সেই গুণের সীমা ছাড়িয়ে উৎকৃষ্টতার চরমে উপনীত হলেন আপনি। যা নির্দ্বিধায় বলতে হয় বিশ্বমানের। একটি ঈঐঅজঅঈঞঊজ-এ চঊজঋঙজগঅঘঈঊ রত অবস্থায় আর একটি ঈঐঅজঅঈঞঊজ-এ ঞজঅঘঝঋঙজগঅঞওঙঘ এর উদাহরণ মঞ্চে এখনও আমার মুগ্ধতার স্মৃতি হয়ে আছে ‘গ্যালিলিও’ নাটকে আসাদুজ্জামান নূর ও ‘হাতহদাই’ নাটকে সূত্রধর থেকে অনারভা-ারিতে প্রবেশ করা রাইসুল ইসলাম আসাদ ভাইকে। আর আয়নাবাজিতে আপনার অসাধারণ রূপান্তর অবশ্যই গেঁথে থাকবে মনে।
সহযোদ্ধা জধংযবফ তধসধহ ভাই আপনি ঋজঅগওঘএ-এগঅঝঞঊজ. চঐঙঞঙএজঅচঐণ-তেও আকৃষ্ট করেছেন। ঈঙগগঊজঈওঅখ অঝচঊঈঞ-এ গানের কথা ও সুরের ব্যবহারে আরও যতœশীল হলে ভালো হতো। তবে শেষের গানটিতে বেশ মজা পেয়েছি। পার্থ বড়ুয়া হিসেবে পার্থ বড়ুয়ার উপস্থিতি যথাযত মনে হয়নি। উপস্থাপিকা নাভিলা নিজস্ব আঙ্গিকের বাইরে গিয়ে নব্য হিসেবে চরিত্রে উপস্থিত হতে সক্ষম হয়েছেন। লুৎফর রহমান জর্জকে আর একটু যতœবান অভিনয় দেখতে পারলে ভালো লাগত। গউসুল আলম শাওনকে স্টুডিও মালিকের চেয়ে ধার্মিক চরিত্রে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ হয়েছে। সবকিছুর উর্ধ্বে একটি বিশ্বমানের ইমেজ বা খঙঙক দেবার জন্য ‘আয়নাবাজি’ টিমকে সাধুবাদ। সাধুবাদ জরঢ়ড়হ ঘধঃয ও জুয়েল ভাইকে তাদের কারিগরি দক্ষতার প্রকৃষ্ট ব্যবহারের জন্য। জঊঅখওঞণ এর পরিপ্রেক্ষিতে একজন মানুষ দাঁড়ি-গোঁফ ও অন্যের বেশভুষা নিয়ে দীর্ঘদিন জেলে কারাভোগ করা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু এখানেই জাদুকরের মুনসিয়ানা। ফাঁকিবাজি জেনেও সকল বাস্তবতার কথা ভুলে গল্পের ঞডওঝঞ ও নির্মাণের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কখন যে সময় কেটে যায় টের পাওয়া যায় না।
অতি সাধারণ তথাকথিত বাংলা সিনেমার দর্শকদের জন্য নাচে, গানে ও ফাইটিং দৃশ্যে ফরম্যাটেট ছবিই যে ব্যবসা সফল তা ভুল প্রমাণিত হতো যদি ‘আয়নাবাজি’ সেই পরিমাণ হলে মুক্তি পেত ও দেশে পূর্বের মতো সেই পরিমাণ হল যদি থাকত।
সেই ক্ষেত্রে ‘আয়নাবাজি’ বর্তমান বেশি বাজেটের চলচ্চিত্রের জন্য ইন্ডাস্ট্রির অন্য ধারার চলচ্চিত্রের একটি উদাহরণ। যারা এখনও ‘আয়নাবাজি’ দেখেননি, তাদের বলছি ছবিটি হলে গিয়ে দেখুন। যথেষ্ট বিনোদন তো পাবেনই, সেই সঙ্গে আপনার পয়সা খরচ পরিপূর্ণ উঠে আসবে সন্দেহ নেই। পরিশেষে সর্ব শ্রেণির দর্শকদের মেধা ও বোধের উপর আস্থা রেখে সাহসী পরিচালনার জন্য এবং সিনেমার সুদিন আগমনের আশার আলো জাগানোর জন্য অমিতাভ রেজা ও গউসুল আলম শাওন ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ।
লেখক : অভিনেতা