রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী!
রবিউল আলম
আমার মনে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খায় তাহলোÑ তেল, গ্যাস রক্ষা কমিটি কী? তেল ও গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উৎপন্ন হয়। তা তারা রক্ষা করবে কীভাবে? এখন তেল, গ্যাস রক্ষা কমিটির ব্যানারে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বিরোধীতা তারা করছে। আমার যদি ভুল না হয়, এই কমিটিতে আছেন কিছু ভাড়াটিয়া লোক, যাদের জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানববন্ধনে দেখা যায়। আমার মনে তখনই প্রশ্ন জাগে, আসলে ওরা কারা, কী ওদের কাজ? তেল, গ্যাস সবই রক্ষা করেন এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। রক্ষা করে কি করবেন তা জনসাধারণকে অবহিত করুন। আর আন্দোলন করার জন্য জনসাধারণকে সঙ্গে নিন। জনগণ যদি চায় অন্ধকারে থাকতে তবে কেন সরকার এত টাকা খরচ করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে?
আপনারা স্লোগান তুলেন অনেকটা এরকম করেÑ ‘পানি চাই, বিদ্যুৎ চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই’, ‘তেল-গ্যাস রক্ষা করো, করতে হবে,’ ‘শ্রমিকের দাবি মেনে নাও, মানতে হবে,’ ‘কাজ চাই, ভাত চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই’Ñ সবই ঠিক আছে। কিন্তু এটা কি ভাবেন একবারওÑ আপনাদের এসব দাবি পূরণ করতে হলে বিদ্যুৎ লাগবে, শিল্প লাগবে, পুঁজি লাগবে। সরকার যখন অনেক কষ্টে বিদ্যুৎ, শিল্প, ও পুঁজি জোগাড় করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে তৎপর, ঠিক তখনই আপনারা সেøাগান দিতে থাকেনÑ ‘পুঁজিবাদের হাতিয়ার ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’। আমার বুঝতে খুবই কষ্ট হয়, আপনারা আসলে কী চান? আমার মাথায় এমন রাজনীতির মারপ্যাচ ঢুকে না। জানার আগ্রহ থেকে বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি এস.এম রুমিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এটা কী ধরনের রাজনীতি বলুন তো, আমার মাথায় তার কিছুই ঢুকে না! রুমি সাহেব আমার কথা শুনে বলেছিলেন, ইস্যু তৈরি করা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, ইস্যু কী? তিনি বললেন, ‘আমার সঙ্গে আয়, ইস্যু কি তোকে বোঝামু।’
মতিঝিলে একটি সম্মেলন চলছে, অনেক লোকজন উপস্থিত। রুমি সাহেবের সঙ্গে আমরা বিশ-পঁচিশ জন, সঙ্গে রিকশা শ্রমিক লীগের ইনসুর আলীও ছিলেন। হঠাৎ বিকট আওয়াজে গাড়ি ভাঙা হচ্ছে। পরে শুনেছি এই অবৈধ সম্মেলন মানি না, মানবো না সেøাগান দিতে দিতে শ্রমিক লীগের অফিস দখল করে নিলেন রুমি সাহেব। পরে জানলাম, জাতীয় শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান ভূইয়া সম্মেলনের মাধ্যমে রুমি সাহেবকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। গাড়ি ভাঙা ও অফিস দখল করার নাম নাকি রাজনৈতিক ইস্যু। তিনি আমাকে বললেন, বুঝলি তো, রাজনৈতিক ইস্যু কী! আমি কিছু না বুঝেই বললাম, জ্বি, জ্বি।
তিনি আরও বললেন, ‘তুই বুঝিস নাই, শোনÑ আমি যদি সম্মেলনে হাজির হতাম তবে ওরা আমাকে বাদ দিয়ে দিত, ইস্যু তৈরি করে সম্মেলন প- করে দিলাম, অফিসও আমার দখলে নিলাম। এখন আমাকে বাদ দিবে কিভাবে? রাজনীতিতে টিকে থাকতে ইস্যু লাগে, জনগণ বাদ দিলে কিছু হয় না।’ তেল, গ্যাস রক্ষা কমিটিও যদি রামপাল বিদুৎকেন্দ্র স্থাপনকে ইস্যু তৈরি করে তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আর যদি জনগণের জন্য দেশ রক্ষা না করে তেল, গ্যাস রক্ষা করতে চান, ইস্যু তৈরি করতে চান, জ্বালাওপোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাসী বিএনপি-জামায়াতের কাছে ইস্যু বিক্রি করতে চান, তবে জনগণ আপনাদের আন্দোলন মানবে না। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান