কাশ্মীর নিয়ে বিশ্বপ্রতিক্রিয়া
আমিন ইকবাল : কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও নিরাপত্তাবাহিনীর সংর্ঘষ যেন থামছেই না। প্রতিদিনই সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা বা নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হচ্ছে শিশু, নারী, স্কুলছাত্রসহ অনেক সাধারণ মানুষ। তাছাড়া তিন মাসেরও বেশি সময় টানা কারফিউ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ধর্মঘটে অনেকটাই থেমে আছে কাশ্মীরিদের জীবনযাত্রা। খাবার, পানি ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লাখো মানুষ। বন্ধ হয়ে আছে শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।
এত কিছুর পরও কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে কৌশলগত কারণে নীরব বিশ্ব বিবেক। ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর কোনো পদক্ষেপ নেই। খুব একটা কথা বলছে না বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোও। জাতিসংঘ প্রতিনিধি পাঠানোর কথা বললেও ভারত ভেটো দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি কাশ্মীরের মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ বলেছেÑ ‘আমাদের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি। দীর্ঘায়িত সংঘাতসহ অন্যান্য সংঘাতের ক্ষেত্রে যে ধরনের সমস্যা থাকে এখানেও তার ব্যাতিক্রম নয়।’ তবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে গণভোটের জন্য একটি রেজ্যুলেশন করেছে জাতিসংঘ। রেজ্যুলেশন বাস্তবায়নের জন্য ১৪ সদস্যের একটি কমিটিও করা হয়েছে। কিন্তু চলমান সংঘাত শুরুর পর এখন পর্যন্ত কাশ্মীর পরিদর্শনে আসেনি জাতিসংঘের কোনো প্রতিনিধি দল।
অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বলেছে, কাশ্মীরের সংকট নিরসনে সেখানকার জনগণের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। আর একটি গণভোটের মাধ্যমে সেখানকার জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হবে। চলমান সংকট উত্তরণের গোটা প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের মধ্যস্থতার দাবি জানায় ওআইসি।
তবে, কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে তেমনকিছু পরিষ্কার করেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো। তবে এ ইস্যুতে পাক-ভারত উত্তেজনায় পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়ে চীন ও সৌদি আরব বলেছে, আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যা সমধান করা উচিত। কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত উত্তেজনা নিরসনে আলোচনার উপরই সবসময় জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া।
যদিও সাম্প্রতিক উত্তেজনার সময় রাশিয়া এক অস্পষ্ট ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। পাক সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি অনুযায়ী, এ সময়টাতে রাশিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে এক যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নেয়। তবে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের প্রতি রাশিয়ার সমর্থন অনেক পুরনো। ২০০৩ সালে প্রকাশিত টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়- কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে থাকবে রাশিয়া।
এদিকে, কাশ্মীর ইস্যুতে সর্বশেষ পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়েছে আজারবাইজান। ১৪ অক্টোবর দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারতীয় সেনারা কাশ্মীর বিষয়ে জাতিসংঘের রেজ্যুলেশন মানছে নাÑ এটি খুবই দুঃখজনক।’
কাশ্মীর ইস্যুতে শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে পাকিস্তান। কাশ্মীরের মানুষের অধিকার, তাদের ওপর ভারতীয় বাহিনীর অত্যাচারÑ ইত্যাদি বিষয়ে বেশ সোচ্চার দেশটি। এজন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ে অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছে নওয়াজ শরিফ সরকার।
এদিকে, কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ভারতের কংগ্রেস দায়ী করছে কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপিকে। কংগ্রেসের দাবিÑ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংসহ বিজেপি নেতাদের উল্টাপাল্টা বক্তব্যই কাশ্মীর পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছে। কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গোলাম নবী আজাদ বলেন, কাশ্মীর প্রসঙ্গে মোদি সরকার ঘুমন্ত।’
কাশ্মীর নিয়ে কথা বলেছে ভারতের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র আফগানিস্তান। কাশ্মীর অস্থিরতার জন্য তারা পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে এবং এক্ষেত্রে তারা ভারতের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে। আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশেরও ভারতের প্রতি সমর্থন রয়েছে। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি