‘বাঁচো, ভালবাসো আর হাসো’ বিষণœতা কাটাতে দীপিকার মন্ত্র
পরাগ মাঝি : ২০১৪ সালের শুরুর দিকের এক সকাল। ঘুম থেকে উঠার পরই নিদারুণ এক বিষণœতায় ডুবে যান বলিউড সুন্দরী দীপিকা পাডুকোন। এ বিষণœতা কিছুতেই যেন কাটছিল না। অথচ সদ্য শেষ করা ২০১৩ সালটি তার জন্য ছিল দারুণ সাফল্যের এক বছর। ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি, চেন্নাই এক্সপ্রেস এবং গোলিও কি রাসলীলা : রামলীলার মতো ‘ব্লকব্লাস্টার’ খ্যাত সিনেমাগুলোয় তিনি সে বছরই অভিনয় করে অঘোষিত বলিউড রানিতে পরিণত হন। আর বছর পেরোতেই রানি তলিয়ে যেতে বসেছিলেন বিষণœতার সাগরে।
২০১৫ সালটি ছিল দীপিকার জন্য ব্যাতিক্রম। কারণ তত দিনে তিনি তার সব বিষণœতা কাটিয়ে উঠেছিলেন। বিষণœতা কাটাতে তাকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে। এ যুদ্ধে কেবল জয়-ই নয়, দীপিকা বিষণœতা কাটানোর মূলমন্ত্রও আবিষ্কার করে ফেলেন। তিনি আবার তার পুরনোরূপে কিন্তু নতুন উচ্ছল আনন্দে বিষণœতার কালো পানি থেকে মাথা তুলে বলেন, বাঁচো, ভালবাসো আর হাসো।
এই ছিল তার মন্ত্র! এ মন্ত্রেই তিনি বিষণœতায় ডুবা সব মানুষকে সুখী করতে চান। তার ‘লিভ-লাভ-লাফ’ ফাউন্ডেশান এমন মহৎ উদ্যোগ নিয়েই অগ্রসরমান।
নিজের গড়ে তোলা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে দীপিকা বলেন, ‘যারা বিষণœতা, উদ্বেগ ও অবসাদের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে তাদের কীভাবে আরও ভালোভাবে বুঝতে হয় তা আমরা জানি। তারা সহযোগিতার আশ্বাস চায়। লিভ-লাভ-লাফ ফাউন্ডেশন সবার জন্য একটি উন্মুক্ত অঙ্গন যেখানে সবাই বিস্তৃত জ্ঞান লাভ করে, পেশাদারদের সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং তারা অনুভব করে যে, তারা এক নয়। এখানে সত্যিকারের সহযোগিতা।
দীপিকার দেশ ভারত সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ৬-৭ শতাংশ লোক তীব্র অথবা মৃদু মানসিক রোগে ভোগে। মোট জনসংখ্যার হিসাবে যা দাঁড়ায় প্রায় ৭ কোটি মানুষ। এ বিপুলসংখ্যক মানসিক রোগীর সেবায় ভারতে মাত্র সাড়ে তিন হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী রয়েছে। তাই মানসিক রোগ এবং বিষণœতায় ডোবা মানুষগুলো যেন অসহায় জীবন-যাপন করে।
বলিউড সেনসেশন দীপিকা তার দেশের মানুষের এ অসহায়ত্তকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। কারণ এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে তাকেও যেতে হয়েছিল। অবসাদগ্রস্তদের অসহায়ত্ত ঘোচাতেই দীপিকা উদ্যোগী হন এবং গড়ে তোলেন লিভ-লাভ-লাফ ফাউন্ডেশন।
নিজের অতীত বিষণœ সময়ের কথা স্মরণ করে দীপিকা বলেন, ‘আমি যখন ডিপ্রেশন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম তখনই বুঝতে পারলাম এমন বিষণœতায় ডুবে আছে দেশের কয়েক মিলিয়ন লোক। প্রতি চারজনে একজন সারা জীবনে অন্তত একবার অবসাদ এবং বিষণœতায় ভোগেন। সামাজিক অসহযোগিতা এবং অজ্ঞতার জন্য তাদের একসময় পাগল হওয়ার দশা হয়।’
২০১৫ সালের শুরুতেই দীপিকা সিদ্ধান্ত নেন, তিনি তার বিষণœ সময়ের গল্পগুলো সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দেবেন। আর এ গল্প থেকেই এ ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগা মানুষগুলো নতুন করে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাবে। ৬ মাস পরই তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অ্যানা চাঁদনি, ড. সিয়াম ভাট, অনির্বাণ ব্লাহ এবং নিনা নায়ার।
দীপিকা বলেন, ‘এভাবেই আমরা গড়ে তুলেছি লিভ-লাভ-লাফ ফাউন্ডেশন। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম