মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আবারো সংঘর্ষ, নিহত ৩৯
ইমরুল শাহেদ : মিয়ানমারে গত রোববার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন পুলিশ এবং ২৬ জন নিরস্ত্র বেসামরিক লোক। ঘটনার পরপরই বেসামরিক লোকদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের অভিযান তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ার পর শুক্রবার প্রাণ ভয়ে উত্তর মিয়ানমার থেকে হাজার হাজার মানুষ কেউ পায়ে হেঁটে কেউ হেলিক্প্টারে করে পালাতে শুরু করেছে। সেনাবাহিনী পোড়া ঘরবাড়ির মধ্যেই কারা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। এভাবে রাখাইন প্রদেশ আবারও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা মনে করেন, মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশের লোকজন অনেক দিন থেকে পুলিশের উপর হামলা করার পরিকল্পনা করেছে। বাংলাদেশ সীমান্তে পুলিশ পোস্টে হামলার ঘটনাটি তারই পরিণতি। সেনাবাহিনীর তল্লাশি অভিযানের সময় বেশকিছু লোক মারা গেছে। সেটা ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথাই মনে করিয়ে দেয়। সে সময় রাখাইন প্রদেশে প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছিল এবং হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। শুক্রবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সেনাবাহিনী ও পুলিশ একটি নিরাপত্তা কেন্দ্রে ৫০ জনের লাশ পেয়েছে। হামলাকারী সন্দেহে এ পর্যন্ত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে। বিভিন্ন পরিবার ও লোকজন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাইসাইকেলে, রিক্সায় নিয়ে মংডু থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৮০ জন শিক্ষক, কর্মচারী এবং আবাসনের লোকজন হেলিকপ্টারে করে গোলযোগপূর্ণ এলাকা ছেড়েছে। সরকারি কর্মচারীরা প্রদেশটির রাজধানী সিটউইতে এসে সমবেত হয়েছে।
একজন ফরাসী সাংবাদিক দেখেছেন, মংডুতে বেশকিছু বাঁশের ঘর পুড়ছে এবং সেগুলোর ধোঁয়া আকাশের দিকে কুন্ডুলি পাকিয়ে উঠছে। কিন্তু সেনাবাহিনী বলেছে এসবই হচ্ছে দুর্বৃত্তদের কাজ। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সেনাবাহিনী রোববার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ২৬ জনকে হত্যা করেছে। হামলার রাতে নিহত হয়েছে নয় পুলিশ। এর পরবর্তী সংঘর্ষে আরও চার জন পুলিশ নিহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সেনাবাহিনী রোববারের হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে নিরস্ত্র বেসামরিক মুসলমানদের উপর ঝাপিয়ে পড়তে। কিন্তু সেনা বাহিনী বলেছে, তারা অস্ত্রধারীদের হাত থেকে আত্মরক্ষা করছেন মাত্র।
উত্তর রাখাইনের বেশিরভাগ বাড়িঘরই রোহিঙ্গাদের। মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ট বৌদ্ধরা মনে করেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আগত ইমিগ্রান্টার। দি অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন এক বিবৃতিতে সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তারা জানতে পেরেছেন নির্বিচারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী তাদের গণহারে গ্রেফতার করছে। তবে রাখাইন সরকারের মুখপাত্র মিন অং বলেছেন, সীমান্তে থাকা হামলাকারীরা গত কয়েক মাস থেকেই হামলার পরিকল্পনা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মিয়ানমারের সাতটি টার্গেটে আঘাত হানা। তিনি সিটউইতে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এ হামলাকারীদের গ্রুপে রয়েছে ২-৩শ সদস্য।’ কিন্তু এটা তিনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন জানতে চাওয়া হলে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, তাদের টার্গেট ছিল ছয় থেকে সাত স্থান।’ তবে এর নেপথ্যে কারা রয়েছে, সে বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যথাযথ তথ্য-প্রমাণাদি দিতে পারেনি। কর্মকর্তারা বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের প্রতি আঙ্গুল নির্দেশ করলেও গোপনে তারা বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বিদ্রোহীরা প্রবেশ করছে বলে মনে করে।
সেনাবাহিনী বলেছে, তারা পঞ্চম যে সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে, তার কাছে পাওয়া গেছে অস্ত্রশস্ত্র, আরএসও লোগোর একটি পতাকা। আরএসও হলো রোহিঙ্গাদের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। এ গ্রুপটি গত আট দশকেই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। সূত্র : ব্যাংকক পোস্ট