কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত বাংলাদেশ-চীন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কথা বললেন দুই নেতা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ‘পারস্পরিক সহযোগিতার’ ক্ষেত্র থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হয়েছে। কৌশলগত অংশীদারিত্বের অধীনে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়তে একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকায় সফররত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
চীনের ‘ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ বাস্তবায়নে একসঙ্গে এগোনোর পাশাপাশি নৌ যোগাযোগ ও সন্ত্রাসদমনের মতো বিষয়গুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার বিষয়েও দুই দেশের মতৈক্য হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা সফররত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক যুক্ত বিবৃতিতে এই মতৈক্যের ঘোষণা আসে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই সহযোগিতা হবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠকের পর দুই নেতার উপস্থিতিতে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই হয়, ছয়টি প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন তারা। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দুই নেতাই বিবৃতিতে জানান।
বিকাল চারটায় শি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা খুবই ঘনিষ্ঠভাবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আজকে হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় উপনীত হয়েছে।
আজকে আমরা ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র থেকে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছি। আমরা ছয়টি প্রকল্পও উদ্বোধন করেছি। এই চুক্তি ও প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের পর দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া উচ্চপর্যায়ে পৌঁছবে। তিনি বলেন, এই কৌশলগত অংশীদারিত্বের অধীনে আমরা দুই দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করতে সম্মত হয়েছি। আমাদের এ প্রচেষ্টার লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক মধ্য আয়ের দেশ এবং পর্যায়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উপনীত হওয়া। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বঞ্চনামুক্ত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব।
জিনপিং বলেন, ২০১৭ সাল হবে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বন্ধুত্বের বছর। দিন দিন দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন অর্থনৈতিক সহায়তার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।
জিনপিং শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি খুব খুশি ছয় বছর পর বাংলাদেশের মতো একটা সুন্দর দেশ সফর করতে পেরেছি। চীন ও বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু এবং ভালো অংশীদার। আমি মনে করি, এই সফর সামগ্রিকভাবে দুই দেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন, বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন একটি নতুন ঐতিহাসিক সূচনা বিন্দুতে এবং একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে।
পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল এবং একে অন্যকে সমর্থন করে এমন বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন।
শেখ হাসিনা বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে কয়েক মিনিট আগে আমাদের উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। আমরা এক চীন নীতিতে আমাদের জোরালো সমর্থন দিয়েছি। আমরা খুবই ঘনিষ্ঠভাবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ব্যবসা ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো, শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ও কৃষি খাতে একযোগে কাজ করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা এখানে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সাক্ষী হলাম। এই চুক্তিগুলো হয়েছে ব্যবসা, বিনিয়োগ, সমুদ্র অর্থনীতি, বিসিআইএম-ইসি, সড়ক ও সেতু, রেলপথ, পাওয়ার, সমুদ্র, আইসিটি, শিল্প উৎপাদন, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতার উন্নয়নসংক্রান্ত।