যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : কে কার আগে?
সৈয়দ রশিদ আলম
লেখক: কলামিস্ট
হিলারি বনাম ডোনাল্ড ট্রাম্প, কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এটা নিয়ে বিশ্বব্যাপী জরিপ চলছে, গবেষণা হচ্ছে, বিতর্ক হচ্ছে। দুই প্রার্থী ইতোমধ্যে দুবার মুখোমুখি বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন। পরস্পরকে কাবু করার জন্য যা করার প্রয়োজন তাই-ই করেছেন। কিন্তু দুটি বিতর্কের পর জরিপের ফল অনুযায়ী হিলারি এগিয়ে আছেন। জরিপটাই চূড়ান্ত নয়, চূড়ান্ত হচ্ছে ভোটের ফলাফল কি হবে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করা। ১০ অক্টোবর দুই প্রার্থীর মধ্যে বিতর্কটা তিক্ততার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। একটি পর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলেন না। বারবার পায়চারি করছিলেন, ক্রোধের দৃষ্টির সঙ্গে হিলারিকে দেখছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বলে ফেললেন, তিনি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন তাহলে হিলারি ক্লিনটনকে কারাগরে পাঠাবেন। তার এই বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে, ট্রাম্প নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। এতদিন ট্রাম্প যা খুশি তাই করে বেড়িয়েছেন, সবকিছুকে পেতে অভ্যস্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প লক্ষ্য করছেন ধীরে ধীরে তিনি জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলছেন, কিন্তু তারপরও তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। তিনি মনে করেছিলেন, বিল ক্লিনটন-এর অন্ধকার দিক তুলে ধরে তিনি হিলারিকে কাবু করবেন, কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না।
আমেরিকান জনগণ ক্ষমাপ্রার্থীদের সাধারণত ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন। বিল ক্লিনটন একাধিকবার তার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন, ক্ষমা পেয়েছেন, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমা করতে পারছেন না। কারণ, তার কাছে এমন কোনো ট্রাম্প কার্ড নেই যা দিয়ে তিনি হিলারিকে পরাস্ত করতে পারেন। বারবার তিনি হিলারির শারীরিক দুর্বলতা, ই-মেইল এর ঘটনাগুলো তুলে ধরছেন, চেষ্টা করছেন হিলারিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে, তাও তিনি পারছেন না। ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, তাহলে উত্তর কোরিয়া, ইরান, সিরিয়া ও চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বেন। সন্ত্রাসীদের দমন করার নামে একাধিক দেশে তিনি বিমান হামলা ও মিসাইল হামলা চালানোর নির্দেশ দিবেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলো আরও বেশি উগ্রতা প্রদর্শন করবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সন্ত্রাসবাদ বেড়ে যাবে। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর নৌযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। কিউবায় নতুন করে তিনি অবরোধ করে বসবেন। প্যালেস্টাইনদের উপর অত্যাচারের মাত্রা ইসরাইল বাড়িয়ে দিবে। সিরিয়া ও ইরানকে তিনি অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে ঠেলে দিবেন। চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ করে বসবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে, স্প্যানিশ, আফ্রিকান ও এশিয়ানদের উপর নানাধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে সংঘাতের রাজনীতি বেড়ে যাবে। মুসলমান ও নিগ্রোদের উপর অত্যাচার অনেকটাই বেড়ে যাবে। পক্ষান্তরে হিলারি ক্লিনটন যদি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, তাহলে তার যোগ্যতা দ্বারা, সিরিয়া, ইরান, চীন, রাশিয়া, কিউবা ও উত্তর কোরিয়াকে কূটনৈতিকভাবে কাবু করতে চাইবেন। চার বছর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। সারা পৃথিবী তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। কোন দেশের সঙ্গে কি ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে বা কোন দেশের বিরুদ্ধে কি ধরনের সামরিক বা কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে যাবে, তা তিনি ভালো করে জানেন।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তান দ্বন্দ্বকে তিনি আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলতে চাইবেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তিনিও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবেন তবে কৌশলের সঙ্গে, যে কৌশলটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জানা নেই। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ একাধিক কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর বিরক্ত, তার উগ্র আচরণ, উগ্র কথাবার্তা সবাইকে বিরক্তের শেষ সীমায় নিয়ে গেছে। কি বলতে হবে, আর কি বলতে হবে না এটাও তিনি ভুলে গেছেন। বিত্তবান ডোনাল্ড ট্রাম্প সবকিছুকে অর্থ দিয়ে কিনতে অভ্যস্ত, কিন্তু আমেরিকান জনগণের ভোট পাওয়ার জন্য যে দৃঢ় মনোবল থাকা দরকার তা তার নেই। প্রতিদিন তিনি নিঃস্বঙ্গ হয়ে পড়ছেন। একা হয়ে পড়ছেন। আবাল-তাবোল বলা শুরু করেছেন। এই লোক যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন ফলাফল কারোর জন্য ভালো হবে না। এটা সবাই বুঝতে পারছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় স্থানীয় লোকদের মাঝে একটি কৌতুক বলা শুরু হয়েছে, কৌতুকটা এরকম, ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক ডেন্টাল হসপিটাল করেছেন, সবাই তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে সবাই মিলে একটি মেন্টাল হসপিটাল করলেন, সেখানে সবাই মিলে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সে মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিলেন।
লেখক: কলামিস্ট / সম্পাদনা: আশিক রহমান